জমির উদ্দিনঃ হাজারো স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় মেধাবী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করলেও প্রশাসন পালন করে উদাসীন ভূমিকা। যেসব প্রত্যাশা করে শিক্ষার্থীরা : দক্ষ শিক্ষক, উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্লাসরুম, আবাসিক হলে থাকার অধিকার, পরিবহনের অধিকার, ওয়াই-ফাই, উন্নত চিকিৎসাসেবা, সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চা ও রাজনৈতিক চর্চার অধিকার। সর্বোপরি সেশনজটমুক্ত, নিরাপদ, প্রকৃত উচ্চ শিক্ষার কেন্দ্রে নিজেকে বিকশিত করার প্রত্যাশা থাকে সবার। কিন্তু এর কোনোটিই পুরোপুরি পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ: একদিকে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে মাসের পর মাস ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না, সেশনজটের কবলে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতির অস্থিতিশীলতা কমে গেলে, শুরু হয় চবি সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া। কখনো ছাত্রশিবির-ছাত্রদল, কখনো ছাত্রলীগ-শিবির, এমনকি ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ।ছাত্রলীগের সামনে যখন প্রতিপক্ষ দুর্বল থাকে, অথবা শিবিরকে মোকাবিলা করতে উপর মহল থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকে; তখন তারা নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং-সংঘর্ষে ব্যস্ত থাকে। হত্যার রাজনীতির বলি ১৮ ছাত্র এবং প্রশাসনের করণীয় : চবিতে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে অধিকাংশ ছাত্রই হত্যার রাজনীতি চর্চা করতেন। তবে কেউ কেউ এর বাইরেও ছিলেন। কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীও অপরাজনীতির শিকার হয়ে নিহত হন। এসব হত্যা বন্ধ করতে প্রয়োজন প্রত্যেকটি ঘটনা সম্পর্কে সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিবেদন প্রকাশ করা। তদন্তে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করতে হবে,সন্ত্রাসীদের ঠিকাদারি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সন্ত্রাসীদের রাজনীতি বন্ধ হলেই অনেক সমস্যার সমাধান হবে। সেশনজট অনেকাংশে কমে যাবে। সেশনজট নিরসন করতে : -সেশনজট নিরসন কার্যকরি কমিটি করা যেতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করবে; শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস করতে উৎসাহিত করবে কমিটি। শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসা সেবা বাড়াতে : এখন ক্যানভাসারের মত যেভাবে সব রোগের জন্য প্যারাসিটামল, লিভোসেটিরিজিন, এসিনের মত একই ওষুধ দেওয়া হয়। তাতে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটলে বিস্মিত হবো না। ২০১৩ সালের শুভ হত্যার জন্য মেডিকেল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অদক্ষতাই দায়ী। ওয়াই-ফাই সুবিধা : বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াই-ফাই সুবিধা দেওয়া হলেও, তা খুবই সীমিত জায়গায় এবং স্পিড কম।ওয়াই ফাই জোন ও স্পীড আরো বাড়াতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জায়গা হতে পারতো। কিন্তু এতে প্রতিবন্ধক হিসেবে অপশক্তি প্রয়োগ করে বিএনপি জোট সরকারের আমলে ছাত্র শিবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের আকর্ষণীয় অডিটোরিয়াম ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা, সাংস্কৃতিক চর্চা করতে বাধা দেওয়াসহ সব ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল শিবির। এরপর আওয়ামীলীগও ক্ষমতায় আসার পরে সাংস্কৃতিক চর্চায় বাধা প্রদান করছে ছাত্রলীগ ও প্রশাসন।সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে চাইলে দৈনিক ৮০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়, যা সংস্কৃতি কর্মীদের জন্য প্রায় অসম্ভব। এছাড়াও প্রশাসনিক জটিলতা তো আছেই! শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য : যে মহান শিক্ষকেরা তাঁদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে। সেখানেও দেখা দিচ্ছে নিয়োগ বাণিজ্য। অর্থাৎ যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয় অযোগ্যদের। অদক্ষ ও অবৈধ প্রশাসন: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনে অধিকাংশই অবৈধ উপায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। সিনেট মেম্বার, প্রক্টরসহ বিভিন্ন পদে অদক্ষ লোক দায়িত্ব পালন করছেন। দুর্ভোগ কমাতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন : শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ, যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে ছাত্রী ও শিক্ষিকা,শাটল ট্রেন দখল করছে ছাত্রলীগ, আবাসিক হল দখল করছে ছাত্রলীগ ও শিবির,সেশনজট, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, পরিবহন সংকট, সন্ত্রাসীদের ঠিকাদারি দেওয়া ও প্রশ্রয় দেওয়া, অপরাজনীতির শিকার শিক্ষার্থীরা,বেতন ফি অবৈধ ভাবে বাড়ানো,অনুন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচন হলে এসব সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান হতো।নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের পক্ষে জোরদার ভূমিকা রেখে অনেক সমস্যা সমাধান করার সুযোগ পেতেন। সর্বোপরি সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব, অনিয়ম ও অগণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের জন্য অদক্ষ ও মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল গুলোই দায়ী। এসব সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, হতাশ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, মেধাবিরা যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে তা পূর্ণ করতে পারছে না। সর্বোপরি শিক্ষাব্যবস্থা আজ ধ্বংসের মুখোমুখি।কাজেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ ও আন্তরিক হতে হবে।একই সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।বিকুল তাজিম সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
Discussion about this post