বিডি ল নিউজঃ
বাংলাদেশের মানুষের সভা-সমাবেশ ও চলাফেরার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পর এবার কথা বলার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ভাইবার ও ট্যাঙ্গোর পর হোয়াটসঅ্যাপ, মাইপিপল ও লাইন নামের আরও তিনটি ভয়েস এবং মেসেজিং সেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
বিটিআরসি ও টেলিকম অপারেটর সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভাইবার ও ট্যাঙ্গো বন্ধের সময়সীমা ২১ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। বিটিআরসির পরিচালক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মুঠোফোন কোম্পানি গ্রামীণফোন গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বেলা দুইটা ৫৯ মিনিটে বিটিআরসির কাছ থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পেয়েছে।
বিটিআরসি এবং আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিনা খরচে কথা বলা এবং নিজেদের অবস্থান গোপন রেখে কথা বলার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সাম্প্রতিক সময়ে যোগাযোগের জন্য ভাইবার ব্যবহার করেন। এমনকি নাশকতার কাজেও প্রয়োজনীয় যোগাযোগ সারা হচ্ছে ভাইবার ব্যবহার করে। এ ব্যাপারে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী সেবা দুটি বন্ধে বিটিআরসির সহায়তা চায়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিটিআরসি থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয় মুঠোফোন কোম্পানি ও আইজিডব্লিউগুলোর কাছে। সে অনুযায়ী শনিবার রাত থেকে ভাইবার ও ট্যাঙ্গো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের ডিজিটাল সরকারের রূপকার হিসেবে দাবি করলেও ডিজিটাল যোগাযোগ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এর আগে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ফেসবুক ও ইউটিউব। ভাইবার ও ট্যাঙ্গো বন্ধ করার পর মানুষের মধ্যে এই ধারণা জন্মেছে যে, বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যাতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে না পারেন, সে জন্য ভাইবার ও ট্যাঙ্গো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ধারণা অমূলক হতে পারে। সরকারের এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে বন্ধ হচ্ছে মানুষের বাক স্বাধিনতা।
কলোম্বো ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘লার্ন এশিয়া’র সিনিয়ার রিসার্চ ফেলো আবু সাইদ খান বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এটা ‘উদর পিন্ডি বুঁদোর ঘাড়ে’ চাপানোর মত। আমাদের দেশের যে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা এগুলো রক্ষা করার প্রাথমিক দায়িত্ব হল পুলিশের। যে সমস্ত দেশে এ সমস্ত অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করা হয়েছিল লক্ষ্য করে দেখা যায় সেসব দেশের পুলিশ বিভাগ খুব একটা কার্যকর নয়। উন্নত দেশের পুলিশ বিভাগের কার্যক্রম দেখলে যেমন সম্প্রতি বেলজিয়াম বেশ কিছু সন্ত্রাসীদের তারা ঘায়েল করতে পেরেছে। এর কারণ হচ্ছে এটা কোন সামরিক শক্তি নয়, পুলিশি ব্যবস্থার কর্মদক্ষতা। প্রযুক্তি বন্ধ করে কার্যকর কিছু করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, মূলত নিরাপরাধ সাধারণ মানুষ, ভোক্তা তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে যারা প্রযুক্তি সচেতন তারা এই নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে কিভাবে এগুলো ব্যবহার করতে হয় তা ভাল করেই জানেন। এটা কোন রকেট সাইন্স বা গোপন কোন বিষয় নয় খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। প্রশাসনে যারা আছেন তারা প্রযুক্তির বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞ বলেই এ ধরনের হাস্যকর সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন।
বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তে বিভিন্ন অনলাইন, ফেসবুকসহ সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ব্যবহারকারীরা। বাংলাদেশে ভাইবার বন্ধ হওয়ার এই খবর ইতিমধ্যে এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য হিন্দুর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে।
Discussion about this post