বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন ইসরায়েলের মেন্দি এন সাফাদি। আসলাম চৌধুরী বর্তমানে রাষ্ট্রদোহ মামলায় কারাগারে বন্দি। এর মধ্যে বিবিসিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাফাদি বলেছেন, ভারতে বিএনপি নেতার সঙ্গে বৈঠকের মাস দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক হয়েছে তার।
সাফাদি মূলত ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা এবং একটি কূটনৈতিক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান। তিনি দেশটির একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে লবিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
কিন্তু বাংলাদেশের একাধিক পত্রিকা তাকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
এদিকে ২০১৫ সালের ২০ জুলাই মাসে একটি ইসরায়েলি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়েছে, সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইসরায়েলের গোপন যোগাযোগ হয়েছিল।
লেবাননের রাজনৈতিক দল এবং বাশারের মিত্র হিজবুল্লাহ’র মুখপাত্র আল-আখবার পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল নামে পত্রিকাটি ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
খবরে বলা হয়, সিরীয় সরকার এবং হিজবুল্লাহ’র পক্ষে কাজ করা কম্পিউটার হ্যাকারদের একটি দল সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাজ করা ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন লোকজনের কম্পিউটার হ্যাক করে তাদের মধ্যে যোগাযোগের স্পর্শকাতর তথ্য খুঁজে পেয়েছে।
এর আগে এ বিষয়ে সপ্তাহব্যাপী ধারাবাহিক নিবন্ধ প্রকাশ করে আল-আখবার। এতে বলা হয়, ইসরায়েলি মন্ত্রী আইয়ুব কারার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সিরীয় বিদ্রোহীদের যোগাযোগ হয়েছিল। সাফাদির কম্পিউটার হ্যাক করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আল-আখবারের নিবন্ধগুলোর সঙ্গে সাফাদির যোগাযোগের দলিল সংবলিত বিভিন্ন স্ক্রিনশটও দেয়া হয়। নিবন্ধে অভিযোগ করা হয়, ইসরায়েল সরকারের পক্ষে সাফাদি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন এবং সিরিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনা করে দিয়েছিলেন। লেবাননেও অস্ত্র চালানের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।
পরে সাফাদি টাইমস অব ইসরায়েলের কাছে স্বীকার করেন, প্রায় সাত মাস আগে হিজবুল্লাহ এবং আসাদের সাইবার যোদ্ধারা তার কম্পিউটার হ্যাক করেছিল। বিষয়টি প্রথম শনাক্ত করতে পারে ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। সাফাদি বলেন, ‘সিরীয় সরকার এবং হিজবুল্লাহর গোয়েন্দারা ২০১১ সালে শুরু হওয়া বাশার-বিরোধী আন্দোলন ইস্যু সম্পর্কে জানতে বারবার তার কম্পিউটার হ্যাক করার চেষ্টা চালায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘কাজের সময় আমার সফলতার কথা বিবেচনা করে সব পথেই তারা আমার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। এটা শুধু সিরিয়ার সরকার এবং হিজবুল্লাহ-ই করতে পারে।’
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল-নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে সাফাদি অস্ত্র বিক্রি সংক্রান্ত একটি চুক্তির চেষ্টা করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেছে আল-আখবার।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার উৎখাতে বিরোধী দল বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলি কূটনীতিবিদ মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে। তার ফেসবুকে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে দিল্লিতে তোলা কিছু ছবি দেখে এমন সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সাফাদি।
গত শুক্রবার বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সাফাদি জানান, আসলামের সঙ্গে বৈঠকের দুই মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে তার একটি বৈঠক হয়েছিল। সাফাদি ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন দল লিকুদ পার্টির একজন নেতা।
Discussion about this post