নিজেকে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে পুলিশে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সুমন শেখ নামের এক ব্যক্তি। আর এ ঘটনায় মধ্যস্থতাকারী মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবিন হোসেন (২৪) আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন। তিনি পাঁচখোলা ইউনিয়নের চরকালিকাপুর গ্রামের মোটসাইকেল চালক আলী নেওয়াজ ফকিরের ছেলে।
এদিকে শনিবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে সুমন শেখের বিচার দাবি করেন। সুমন শেখ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হকের চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে এই প্রতারণা করেছেন। তার বাড়ি শহীদুল হকের বাড়ির পাশে। তিনিও একজন মোটসাইকেল চালক।
রবিন হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, সুমন শেখ আইজিপি’র চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে মাদারীপুরের চরকালিকাপুর গ্রামের আলী নেওয়াজ ফকিরকে টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি দেওয়া হয় বলে জানান। পরে আলী নেওয়াজ তার পরিচিত তিন ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা সুমনের হাতে তুলে দেন। যার মধ্যে আট লাখ টাকা দেওয়া হয় গত বছর ২৩ জুলাই ইসলামী ব্যাংক মাদারীপুর শাখার মাধ্যমে। বাকি টাকা বিভিন্ন সময় নগদ দেওয়া হয়। যার মধ্যে পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদের জন্য জাজিরার গোপালপুর গ্রামের ইব্রাহীম মাদবর ১১ লাখ টাকা, কনস্টেবল পদের জন্য মাদারীপুরের চরকালিকাপুর গ্রামের আব্দুর রহমান পাঁচ লাখ টাকা এবং মেরিনা আক্তার তিন লাখ টাকা দেন। পরে চাকরি না হলে তারা আলী নেওয়াজকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। আলী নেওয়াজ তখন চাকরি প্রার্থীদের স্বজনদের নিয়ে শরীয়তপুরে আইজিপির বাড়িতে যান। আইজিপি’র ভাই নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘটনাটি শোনার পর খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে তারা আবার সেখানে গেলে আইজিপির আরেক ভাই ভোজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক বেপারী বিষয়টি উপেক্ষা করে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তখন দিশেহারা আলী নেওয়াজ তার শিক্ষক পুত্রকে নিয়ে ঢাকায় আইজিপি’র কার্যালয়ে যান। পাঁচদিন অপেক্ষা করেও আইজিপি’র দেখা না পেয়ে তারা ফিরে আসেন। আলী নেওয়াজের ছেলে ছিলারচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবিন হোসেন গত ১৭ আগস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টারে গিয়ে আইজিপি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন।
এদিকে চাকরি প্রার্থীদের স্বজনরা গ্রামে আলী নেওয়াজ ও তার পুত্র রবিন হোসেনকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অপমান অপদস্ত করতে থাকে। রবিন হোসেনকে তারা বেধে রাখার হুমকি দেয়। লজ্জা ও অপমানে রবিন শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করে।
সংবাদ সম্মেলনে মাদারীপুরের পাঁচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আইজিপি’র চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি চাকরি দেওয়ার কথা বলে রবিনের বাবার কাছ থেকে টাকা নেয়। চাকরি না হলে পাওনাদাররা টাকার জন্য রবিনকে অপমান করে। মানুষের অপমান সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।’
Discussion about this post