দেশের চলমান ক্ষমতার রাজনীতিতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির গুরুত্ব অনেক বেশি। সদস্য সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ তো বটেই গোটা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এ সমিতির প্রার্থী মনোনয়নে তাই চলে হাওয়া ভবন আর সুধা সদনে দেন-দরবার। চলে শত শত কোটি টাকার নির্বাচন ব্যবসা। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভিতরকার একটা রাস্তায় জ্যাম নিরসনে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না কিন্তু নির্বাচনী মনোনয়ন পেতে রাতকে দিন, দিনকে রাত করতে সদা প্রস্তুত থাকেন সবাই।
সমান তালে চলে প্রচারনার কাজ। ভোটের আগের তিন চার মাসে এমন কোনো দিন নেই যে, একজন আইনজীবীর ফোনে দশ বিশটা ক্ষুদে বার্তা আসে না। আর লিফলেট তো আছেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, অলিতে-গলিতে, সিঁড়িতে, চেম্বারে। কোথাও দাঁড়িয়ে ভোট ভিক্ষা চাইতে কার্পণ্য করেন না প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করা জুনিয়র কিংবা ভাড়াটে লোকজন। সারাদিন কাজ করলে ২০০ টাকা বা তার বেশি, দুপুরের খাবার এবং কাজ ফুরোলে এতদিনের ব্যবহার করা কোটটাও একজন কর্মীর নিজের হয়ে যায়।
আপনি হয়ত রাস্তার পাশে বা চেম্বারে আয়েশ করে বসে যেই না চায়ে চুমুক দিতে যাচ্ছেন, হঠাৎ করে কালো কোট-টাই পরিহিত কেউ একজন লিফলেট নিয়ে হাজির, ‘এক্সকিউজ মি, স্যারের জন্য ভোট চাই, দোয়া চাই।’ বেশ বিব্রতকর এবং বিরক্তিকর এমন কাজ করে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে প্রধানত বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল আর আওয়ামী সমর্থিত সাদা প্যানেলের নির্বাচনী ফরমায়েশ।
কেনো এমনটি ঘটে তা খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, দেশের জনসংখ্যার বড়ো একটা অংশ মনে করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ছাড়া তাদের কোনো গতি নেই। ঠিক আইনজীবীদের মধ্যে কম বেশি একই চিন্তা-চেতনার ছাপ লক্ষ্য করা যায়।
পেশাজীবীদের সংগঠন চালাবে সমস্ত পেশাজীবী কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। ভোটার-প্রার্থী ঠিক করার দায়িত্ব তো সদস্যদের। অথচ প্রার্থী ঠিক করে দেওয়া হয় সুধা সদন আর হাওয়া ভবন থেকে। এই দুই ভবনের কৃপা অন্বেষণে অনেক যোগ্য ও দক্ষ আইনজীবীকে নিজস্ব মূল্যবোধ বিকিয়ে সামান্য ক্ষমতার মোহে পদলেহনে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। এতে পেশাজীবীদের চিন্তার চরম দৈন্যতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সর্বশেষ, সংবিধানের ১৫ তম সংশোধনীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী পাশ হলো। সেখানে ঢাকা আইনজীবী সমিতি বা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোনো তৎপরতা আমরা খেয়াল করিনি।
দলীয় সুরম্য ভবন থেকে যে নির্দেশনা পান সংশ্লিষ্ট দলের মনোনিত ব্যক্তি ঠিক সেটাই চাপিয়ে দেন সাধারণ আইনজীবীদের ওপর।অথচ আইনজীবী সমিতির কার্যক্রম দল-মত নির্বিশেষে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারলে সেটা হতে পারত ন্যায় বিচারের অন্যতম রক্ষাকবচ।
লেখকঃ এরশাদুল বারী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
Discussion about this post