গণতন্ত্রের বিকাশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দর্শন চর্চারও প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। একই সঙ্গে তিনি বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবহারিক পর্যায়ে প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ানোরও পরামর্শ দেন।</div> শুক্রবার ০৫ ফেব্রুয়ারীবেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন টিএসসিতে দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অষ্টম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।</div> প্রধান বিচারপতি বলেন, যিনি দার্শনিক তিনি মূলত পৃথিবীর সব মানুষের পক্ষ হয়ে নিরবে এক সুবিশাল দায় পালন করে যান তার নিরবিচ্ছিন্ন সাধনার মাধ্যমে। দর্শন সমগ্র সত্তার প্রকাশ, স্বরূপ ও আদর্শ উপলব্ধির যুক্তিগ্রাহ্য বিজ্ঞান। দার্শনিকদের দেয়া সুচিন্তিত অনুমান, প্রকল্প ও ধারণাকে কাজে লাগিয়েই বিজ্ঞানীরা চালিয়েছেন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা।</div> দর্শনচর্চার মূল্য সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের উক্তি তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আইনের ভয়ে অন্যেরা যা করে থাকে, স্বেচ্ছায় ও সানন্দে তা করার প্রেরণা ও ক্ষমতা আমি দর্শন থেকে পেয়েছি।”</div> তিনি বলেন, ন্যায়বিচার ধারণার উন্নয়ন মূলত নৈতিক ও নীতি সম্বলিত বিষয়াবলী ও ঘটনা (দর্শন) থেকে উদ্ভব ঘটেছে। যা পরবর্তীতে আইনের মূলনীতি হিসেবে আদালতে ব্যবহƒত হয়। দর্শনে আইনের কথা, নীতিবাক্য হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকে এবং সেগুলো পরবর্তীতে রাষ্ট্রযন্ত্রে বিধিবদ্ধ আইনে রূপ লাভ করে মানবিক আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।</div> প্রধান বিচারপতি বলেন-দর্শনের জ্ঞান থাকলে মানুষ সহজাত প্রবৃত্তি থেকে আইন মানে ও আইন মান্যকারী হয়। দর্শন ও আইনের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ়। একটি অপরটির সম্পূরক ও পরিপূরক। কেননা আইনের ভিত্তি অনেকাংশে দর্শনের ভিত্তির উপর নির্ভরশীল। তবে দর্শন সবসময় বাস্তবতা বিবেচনায় আইনের মত শক্তিশালী নয়। একজন ভালো আইন বিশেষজ্ঞ হতে হলে তাকে অবশ্যই দর্শন বিজ্ঞানে পারদর্শী হতে হবে। উচ্চ শিক্ষা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রযুক্তিভিত্তিক সুযোগ থাকলেই হবে না। তা হওয়া উচিত উচ্চ গতিসম্পন্ন। ই-বুক, ই-টেক্সট বুক, ই-জার্নাল, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রবন্ধের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক।</div> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ ৫৭টি ব্যাচের প্রায় দেড় হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী দিনব্যাপী এই পুনর্মিলনীতে ১৯৫৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অংশ নেন।</div> দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শহীদ আকতার হুসাইন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।</div>
Discussion about this post