সাঈদ চৌধুরী: আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালম হচ্ছে। ধরিত্রী দিবস একদিকে পালন হয় আর অন্যদিকে ধরিত্রীকে শেষ করে দেয়ার প্রতিযোগীতায় আমরা লিপ্ত। কোন নিয়ম মানছেনা বেশীরভাগ ফ্যাক্টরীর মালিকগুলো, কোন কাজ ঠিকভাবে করছিনা আমরা। আসলে আমরা যদি ভুল কাজ করি তা পৃথিবীর জন্য ক্ষতি এবং পৃথিবীর ক্ষতি বলতেই আমরা ক্ষতিগ্রস্থ্।
বাতাসে যে উপাদানগুলো ছাড়ছি তা আজ থেকে দুই দশক আগেও এদেশের বাতাসে ছিলনা। সালফার, ক্লোরিন ও কার্বনের মত ভয়ানক গ্যাস অনেক অনেক শিল্প এলাকার বাতাসেই বিদ্যমান। তার সাথে এ্যামোনিয়ার বিস্তারণ আছে আমাদের ঘরের পাশে পোল্ট্রির মুরগীর বিষ্ঠাতেই।
পানির অবস্থা মারাত্বক। জলীয় জীবের পঞ্চাশ শতাংশ পর্যন্ত ধ্বংস হয়েছে আমাদের ভারী শিল্প এলাকাগুলোতে! ভূগর্ভস্থ পানি সংকট চোখে পড়ার মত। এক সময় হয়ত ভূগর্ভের পানিও অবিশুদ্ধ হয়ে পড়বে! আমাদের ধরিত্রী তখন আমাদেরকে উগড়ে বের করে দিতে চাইবে।
একটি বিষয় খেয়াল করে দেখেছেন কখনও? আপনার শরীরের ওজনের কতটুকু অংশ বর্জ্র পদার্থ? শরীরের এই বর্জ্র পদার্থ আপনি কতদিনে আপনার ভরের সমান পরিমান পরিবেশে ছাড়েন? একসময় বর্জ্যের ভর আমাদের সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ অংশের ভরের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে এবং সে সময় খুব বেশী দূরে কিন্তু নয় কারণ আমরা কোন বর্জ্যকেই এখন টেকসই অর্থনীতির উপাদান হিসেবে তৈরী কর পারিনি।
একটি ফ্যাক্টরী নিয়ম অনুযায়ী একটি মাত্র জায়গা দিয়ে বর্জ্য পানি ছাড়ার কথা থাকলেও ফ্যাক্টরীগুলো কি তা মানছে? একটি চিত্র দিলাম যে চিত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কয়েকটি মুখদিয়ে একাধারে বর্জ্য পানি বের হচ্ছে এবং বর্জ্যগুলো তীব্র দূষক।
ধরিত্রী দিবস তখনই পালনের সঠিক কার্যকরীতা হবে যখন ধরিত্রীকে আমরা সবুজায়নের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো। সঠিকভাবে নিজেদের ব্যবহার না করতে পারলে আগামী একদশক পর একজন মানুষের তুলনায় তার ভরের সমপরিমানের কয়েকগুণ বর্জ্য প্রকৃতিতে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় চলে আসবে।
শুধু তাই নয় অবাক করার মত বিষয় হবে বাতাসে ভারী মৌলের পরিমাণ বাড়া নিয়ে শঙ্কা। বাংলাদেশে এখনও কোন প্রতিষ্ঠান সরাসরি কোন এলাকার বাতাস বিশ্লেষন নিয়ে কাজ করছেনা। শিল্প এলাকাগুলোতে বাতাসে ভারী মৌল ও ক্ষতিকার মৌলের পরিমাণ কেমন তা কেউ বলতে পারেনা। গাজীপুর অঞ্চলে বর্তমানে বড় বড় কেমিক্যাল শিল্প রয়েছে। এ শিল্পগুলো হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, ব্লিচিং পাউডার, কস্টিক সোডা. সালফিউরিক এসিডের মত তীব্র দূষক পদার্থ উৎপাদন করলেও বাতাসে এ উপাদান কত কেউ বলতে পারবে না।
নদীর অবস্থা হল নদীর পানি এখন ওষুধের মত রং এবং গন্ধে! পানিতে প্রচুর পরিমান তৈলাক্ত ও জেল জাতীয় পদার্থ। নদীর তলা এখন পলিথিনের আস্তরণে ঢাকা । একই ধরনের পচা পানিতে পানিতে সয়লাব ঢাকার আশপাশের সব নদী! নদীর মাছও অনেক কালো প্রকৃতির হয় । এই মাছগুলো শুধু বিপদজনকই নয় স্বাস্থ্যের জন্য অসনি বার্তার একটি বড় ফ্যাক্টরও বলা যায়! নদী দূষণ সরাসরি মানব স্বস্থে বড় হুমকির কারণ আর আমরা সবাই তা মেনে নেওয়ারই যেন অভ্যাস করছি বার বার!
মাটি দূষণের তীব্রতা আরও বেশী। কোন কোন জায়গায় পানি দূষণের কারণে সরাসরি মাটি দূষিত হচ্ছে। মাটির গুণাগুণ কমে গিয়ে পানির ভারী মৌলের উপস্থিতি সরাসরি পানি থেকে মাটিতে এবং মাটি থেকে ফসলে ও ফসল থেকে মানব দেবে স্থানান্তরিত হচ্ছে।
ফলাফল স্পষ্ট, কিডনী রোগ বাড়ছে, বিকলাঙ্গ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি সন্তান জন্মের হার বাড়ছে, হৃদরোগ বাড়ছে, বন্ধাত্ব বাড়ছে, বাড়ছে হঠাৎ হার্ট এ্যাটাকের মত বড় বড় জীবনের ঝুকি!
একটা একটা ঝুকি কমানোর উদ্যোগে দূষণের ঝুকি কমানো যাবে না। সবুজ ধরিত্রী ও দূষণহীন পৃথিবীর জন্য প্রয়োজন দূষণ চক্রকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া।
এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদী সংগঠনের কাজ আরও বাড়াতে হবে। পরিবেশবাদী সংগঠন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যারয়ের গবেষনা টিমকে কাজে লাগিয়ে একটি এলাকার পুরো পরিবেশ ঠিক করতে করনীয় ঠিক করে আগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে শিল্পাঞ্চলে আধুনিক ল্যাব নির্মাণ করে কাজ করতে হবে। এ ব্যপারে সরকার প্রয়োজন আইনও করেও বিভিন্ন ফ্যাক্টরীর বাতাসের মান, পানির মান ও সামগ্রিক পরিবেশের মানের হিসেব চাওয়ার ব্যপারে কোম্পানিগুলোর কাছে নির্দেশনা জারি করতে পারে।
ধরিত্রীকে সবুজ রাখতে উদ্যোগী হোন। নদী বাঁচান, বাতাস বাঁচান, মাটি বাঁচান এবং বর্জ্যকে রুপান্তন যোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করাতে অগ্রনী ভূমিকা নিন। তবেই সবুজ হবে ধরিত্রী আপনিও বাঁচবেন সবুজের মধ্যে।
লেখক: সাঈদ চৌধুরী রসায়নবিদ ও শ্রীপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য।
Discussion about this post