সাঈদ চৌধুরী: আমরা নাগরিক জীবনে সবচেয়ে বেশী যে কথাটি উচ্চারণ করি নিজেদের অধিকারের ক্ষেত্রে, স্বার্থ অথবা যদি বলি একটি নাগরিক হিসেবে সাধারণ কিছু প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে গণতন্ত্র ।গনতন্ত্র দিবস এই দিনটিকেই সাধারণত ধরা হয়ে থাকে । গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া গতিশীল করার ক্ষেত্রে নাগরিকের যে দায়িত্বগুলো আছে আমরা নাগরিক হিসেবে কতটুকু পালন করি এবং তারপর বলি যে আমরা গণতনন্ত্রের স্বাদ থেকে বঞ্চিত ।
খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসার পর বাড়ির কর্তা খুব মায়াময় করে কিছু কথা বলার পর বড় ছেলের জন্য একটি বিয়ের ব্যপারে কথা তুললেন । ঘর ভালো, বংশ ভালো, মেয়ে দেখতেও ভালো । এই সব ভালোর মধ্যেও কি খারাপ আছে তাও তিনি বলে দিলেন । শেষতক বললেন এই মেয়ে আমি ঠিক করে ফেলেছি তোমরা বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নাও । কর্তার আদেশে কেউ কথা না বললেও একে অন্যে খুব কানাঘুষা শুরু হল । ছোট ছেলে বলছে বাবা এটা করলোটা কি ! ছোট মেয়ে বলছে আমরা কি তবে এই পরিবারের সদস্য নয় ? মা বলছে সারাটা জীবন শুধু সিদ্ধান্ত চাপিয়েই দিয়ে গেল তোদের বাবা !
মেজো ছেলে বলেই ফেললো “বাবা, মেয়েটিতো আমাদের পরিবারের মত এত উচ্চ শিক্ষিত নয়” ! বাবার উত্তর “আমি সব বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমরা শুধু বিয়ের প্রস্তুতি নাও” ।সবার আক্ষেপ থাকলেও মেনে নিতেই হবে এটাই যেন তার কথার সারাংশ !
এই বাড়ির কর্তাই আবার রাস্তা দিয়ে হাঁটছে একদিন তার বন্ধুর সাথে । এক সময় খুব কাদাযুক্ত রাস্তায় প্রবেশ করতে হল তাকে । বন্দুর সাথে হাঁটার সময় কোন এক গাড়ি এসে তার পুরো প্যান্ট নষ্ট করে দিল । কাদায় যখন শরীর ভিজছে তখন তার উক্তি “ এই দেশে মানুষ বাস করতে পারে, এর নাম গণতন্ত্র”! বন্ধু জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা বন্ধু তুমি গণতন্ত্রের কথা কেন বললে এখানে । তখন তার উত্তর তুমি রাস্তার কথা এখন সরকারকে বল দেখ সরকার তোমার রাস্তা করে দেয় নাকি ? যদি জনসাধারণের কথায়ই কোন কাজ না হয় তবে গণতন্ত্র কোথা পাবে তুমি ?
একটু খেয়াল করে দেখেন এই বাড়ির কর্তা মহোদয় গনতন্ত্রের স্বাদ নিতে চাইছে কিন্তু পরিবারে তার ভূমিকা কেমন ছিল ?পরিবারের গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তার অসাধারণ বিরোধিতা এবং জাতীয় জীবনে তার অধিকার প্রাপ্তিতে যথেষ্ঠ গনতান্ত্রিক ভাবধারার প্রবর্তন কতটা সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন ?
নিজের পরিবারে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করার সাথে সামগ্রিক দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বড় একটি সম্পর্ক রয়েছে । ছোটবেলা থেকে একটি শিশু যখন অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে তখন সে নিজের অধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সার্বজনিন অধিকার নিয়েও ভাবতে শিখবে ।
হরহামেশাই সরকারকে গনতান্ত্রিক প্র্রক্রিয়া নিয়ে দোষারোপ করি আমরা কিন্তু গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য জনসাধারণেরও যে ভূমিকা আছে তাও জানা দরকার আমাদের । পরিবারের কর্তার সিদ্ধান্ত যখন শুধু একার সিদ্ধান্ত হয়ে যায় তখন পরিবারের বুদ্ধিমান মানুষগুলোর এগিয়ে এসে কথা বললে সে সিদ্ধান্তে পূণরায় কিছু যোগ করার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা বেড়ে যায় । একটি দেশ সরকার পরিচালনা করে কিন্তু দেশের সামগ্রিক বিষয়গুলো বলা যেতে পারে সাধারণ জনগনের । গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালুর জন্য সরকারের কাজগুলো কিভাবে করলে জনসাধারণ তা অধিকার ভোগ সঠিকভাবে করতে পারবে তা নিয়ে কাজ করতে হবে প্রতিটি মানুষের ।
প্রতিটি মানুষ যদি তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে শুরু প্রশাসনিক প্রতিটি পর্যায়ে জনসাধারন মত প্রকাশ করতে চাইবে এবং এক সময় এই মত প্রকাশই হবে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে বড় উপাদান । আব্রাহাম লিংকনের গণেতন্ত্রের সঙ্গার গনতন্ত্র পেতে হলে প্রতিটি নাগরিকের সহযোগীতা লাগবে আর তবেই রাষ্ট্র যন্ত্র সবার মনের মত করে গনতন্ত্রের স্বাদ দিতে পারবে আমাদেরকে । আসুন মত প্রকাশ করি এবং দেশের উন্নয়নে নিজের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে দেশকে গনতান্ত্রিক একটি মডেল রাষ্ট্রে পরিনত করার জন্য নিজেদের মেলে ধরি । গণতন্ত্র হোক প্রতিটি নাগারিকের প্রথম অধিকার ।
Discussion about this post