খাদ্যে আমরা বর্তমানে যথষ্ঠ সয়ংসম্পূর্ণ । একটা সময় ছিলো যখন খাদ্য সংকটে আমাদের দেশের মানুষ অনেক মারাও গিয়েছে । দিন পাল্টেছে । কৃষির বিপ্লব ঘটার সাথে সাথে এখন আমরা ধান থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজি উৎপাদনেও সক্ষম হয়েছি । সবচেয়ে বড় ব্যপার হল আমদানি নির্ভরতা এ খাতে অনেকটাই কমে এসেছে যা কিনা আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি শুভ সংবাদই বলা যায় ।যেখানে বর্তমানে “কিন্তু” শব্দটি যুক্ত হচ্ছে তা হল আমাদের খাদ্য, পরিবেশ এবং আমাদের চারপাশের বাস্তুসংস্থানীয় ব্যপারগুলো । আমরা ভালো উৎপাদক হয়েছি ঠিকই কিন্তু মানের দিকে এবং পরিবেশর ভারসাম্যের দিকে বড় ধরনের উদাসীনতা দেখাচ্ছি । প্রত্যেকটি ফসলের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে বিষ নামক জীবনঘাতী উপাদান । বীজ থেকে শুরু করে এর সম্পূর্ণ ফল ধারন পর্যন্ত প্রত্যেকটি স্তরে ভয়ানক সকল কেমিকালিসমে জড়িয়ে যাচ্ছে প্রত্যেকটি ফসল । অবাক হওয়ার মতই বিষয় তা হল যখন আপনার হাতে কোন ফসল বা সবজি পৌছে দেওয়া হচ্ছে তাকে আবার বেশী টাটকা দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে আরও উচ্চমানের ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ।
এতদিন ফরমালিন, কার্বাইড ইত্যাদিন নাম জানা থাকলেও এখন এর সাথে যুক্ত হয়েছে সোহাগা নামের কেমিক্যাল । শ্রদ্ধেয় মাহবুব কবীর মিলন স্যারের স্ট্যাটাস থেকে এ তথ্যটি সংগৃহীত । বাজার থেকে কিনে আনা ফুল কপির সাদা ঔজ্বল্য ভাব দেখে যখন আপনি খাওয়ার জন্য উদ্বেলিত হবেন ঠিক তার পেছনেই আপনার জন্য অপেক্ষা করবে শরীরের জন্য চরম ক্ষতিকর কেমিক্যাল সোহাগা ।
খাদ্যে বিষ নিয়ে সবসময়ই কথা বলা হচ্ছে । কিন্তু আমাদের শুধু খাদ্যেই কি বিষ ? শিল্প সমৃদ্ধ এলাকাগুলোর অবস্থা কি একটু ভেবে দেখা হচ্ছে ? গাজীপুরের অদূরেই মাওনা থেকে ভালুকা অঞ্চলেই কেমিক্যাল প্ল্যান্ট আছে কয়েকটি । ক্লোরিনের মত ভারী গ্যাসও এরা নিসৃত করে পরিবেশে । কার্বন মনোক্সাই, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইডের মত গ্যাসগুলোর পরিমাপকি সাধারন মানুষ জানে ? তারা সবুজ বৃক্ষের মধ্যে থেকে নিশ্বাস নিচ্ছে যখন অসুস্থ্য হচ্ছে তখন তারা ভেবে নিচ্ছে এটা প্রকৃতিরই একটা অংশ! প্রতিনিয়ত বায়ু দুষন একটি নিত্য নৈমিত্তিক প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের শিল্প অঞ্চল গুলোতে । কেউ কি নেই বাতাস মনিটরিং করে একটি স্ট্যান্ডার্ড লেভেলে বাতাসের উপাদান নিয়ে আসার জন্য কোম্পানিগুলোকে চাপ দেওয়ার ?
বাতাসের পর আসুন পানিতে । শিল্প অঞ্চল গুলোর পানির অবস্থা খেয়াল করেছেন ? বড় বড় কোম্পানিগুলো ছাড়া বেশীর ভাগেরই পানি পরিশোধনাগার নেই । ভারী মৌলের উপস্থিতি যুক্ত পানি সরাসরি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে । এমনও এলাকা আছে যেখানে শীতের দিনে পানির পিএইচ থাকে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচের মধ্যে যার আদর্শ মান থাকা উচিৎ সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে আটের মধ্যে !
বায়ু, পানি এবং খাদ্য সব কিছুতেই বিষের উপস্থিতি । তার সাথে আমরা নিজেরা যুক্ত করছি বা করতে বাধ্য হচ্ছি ঔষধের বিষাক্ততা । প্রচুর পরিমান এন্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহারে শরীরে ঢুকে যাচ্ছে জীবাণু !
একটি প্রাণের বেঁচে থাকা নির্ভর করে সুস্থ বাস্তুসংস্থানীয় পরিবেশের উপর । আমাদের খাদ্য থেকে শুরু করে নিঃশ্বাস নেওয়া পর্যন্ত সব কিছুই কেমিক্যালের মধ্যে আবৃত হয়ে যাচ্ছে । ঔষধ খাইয়ে অসুস্থ মানুষ গুলোকে বাঁচিয়ে রাখার প্রানান্তর চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত । প্রচুর পরিমান বেড়ে গেছে ভয়ানক রোগ ব্যধি আর তার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম । পরিবেশের সবগুলো উপাদানই যখন এভাবে ধ্বংশ করে ফেলা হচ্ছে তখন এটা স্পষ্ট করেই বলা যায় আমরো স্লো পয়সনিংয়ের স্বীকার হয়ে যাচ্ছি নিজেদের অজান্তেই ।
খাদ্যে বিষ প্রয়োগ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন এক্ষুনি ।আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সচেতনতা দরকার । ভোক্তা অধিকার আইন ও পরিবেশ আইনের সমন্বিত প্রয়োগ প্রয়োজন এসব ক্ষেত্রে । আমরা যেসব কোম্পানির ভোক্তা সে কোম্পানি দ্বারাই দূষনের শিকার । প্রত্যেকটি শহরের বায়ু পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হোক এবং পানির মান পরিীক্ষার জন্য প্রত্যেকটি শিল্পাঞ্চলে আলাদা আলাদা ল্যাব সরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ।
বাঁচাতে হবে মানুষগুলোকে সুস্থ্যভাবে নইলে এরা দেশের বোঝায় পরিনত হবে একসময় । স্লো পয়সনিং রোধে দ্রুত ব্যবস্থা আশা করছি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ।
Discussion about this post