এমন ঘটনা আগেও শুনে থাকবেন। বারংবার বিয়ে করা যে মেয়ের পেশা। এটিকে আমি বিবাহ ব্যবসা বলি।
সত্য ঘটনার আলোকে- অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়েটি। মন্তুর (ছদ্দ নাম) সাথে ইরেগুলার বন্ধুর সূত্রে পরিচয়।ক’দিনের আড্ডায় ফোন নং আদানপ্রদান, ফেসবুকে দুষ্টুমি দু’জনকে কাছে আনে। মন্তু আবিষ্কার করলো, মেয়েটি তাকে অনেক কেয়ার করে। আগে তো এভাবে কেউ করেনি! ভালোলাগা থেকে দু’জনেই ধীরে ধীরে ভালবাসা নামক গৃহে বন্দি হলো। কোটিপতি বাবা-মায়ের অতি আদরের মন্তু প্রেম খেলায় মত্ত কোন এক অচেনা মফস্সল শহরের অজানা মেয়েটির সাথে। মেয়েটির সম্পর্কে কোন খোঁজ বা কোথেকে জীবনের অংশ হয়েছে হঠাত্ তা জানার কোন প্রয়োজনীতা মন্তু মনে করলো না। এ যে ভালবাসা। অন্ধকারে আলোর দিশা।
আজ পার্কে কাল রেস্টুরেন্ট পরশু কক্সবাজারে ভালই কেটে যাচ্ছে দিন। হঠাত্ সেই ইরেগুলার বন্ধুর সাক্ষাত। “তোমাদের এসব দেখে অনেকেই অনেক কথা বলছে, তোমার বাবার যেহেতু টাকা আছে বিয়ে করে ফেল, ও মেসে থাকে তাকে না হয় একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটে রাখলে, ক বছর পর বাসায় জানালে যেহেতু প্রেম করছ”। মন্তুর আইডিয়া পছন্দ হয়ে যায়। ভালো যেহেতু বাসি, এটি করাই যায়, তাকে সবসময় পাশে পাওয়া যাবে। বন্ধুদের সাক্ষী করে কাবিন নামায় আজীবন পাশে থাকা ও ভালবাসার দোহায় দিয়ে মেয়েটির ইচ্ছাই দেনমোহর নির্ধারন করা হলো ৪৫ লাখ টাকা!
১ টাকা হলেই কি ১ কোটি হলেই কি ও তো আমায় ভালবাসে।নতুন ফ্ল্যাট উজ্জীবিত নব সংসার, জানেনা পরিবারের কেও। দুই মাস পরে মন্তুর চোখে মনে হাজারো প্রশ্ন ভিড় করে। মেয়েটির উন্মুক্ত চলাফেরা। কোথায় সেই টেইক কেয়ার কোথায় ভালবাসা।বাবার টাকায় আর কত? মেয়েটির আরও কয়েকটি ছেলের সাথে সম্পর্ক রয়েছে, তার অগোচরে চলছে বেচাকেনা সে নিতান্ত এক প্রেমিক। জানতে চাইলেই দেনমোহরের খোটা, ডিভোর্সের হুমকি! সম্পর্কের এমন ক্রান্তিলগ্নে আবার সেই ইরেগুলার বন্ধুর আগমন। “যা হবার হয়েছে, তোমাদের জীবন বাঁচাতে তালাক দিয়ে দাও দু জনেই ভাল থাকবে”। মেয়েটি তার চাহিদা মতো ৪৫ লাখ টাকা দাবি করলো, নইলে মামলা, নারী নির্যাতন মামলা, বাসায় জানিয়ে হয়রানি করার হুমকি! টাকার চাইতেও পরিবারের সম্মান যার কাছে বড় সে মন্তু এবার অথই সাগরে। বন্ধু মাধ্যমে আইনজীবীর স্বরণাপন্ন। এ থেকে মুক্তির উপায় কি?
আইনজীবীর শত পরামর্শ মন পূর্ত হয় না, যদি বাসায় জেনে যায় এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে! ভালবেসে অন্ধকারে নির্ঘুম জেগে থাকা। আশ্রয় সেই ইরেগুলার বন্ধু। “আমায় উদ্ধার করো আমি এত টাকা দিতে পারবো না, বাসায় বলতেও পারবো না বাঁচাও এর হাত থেকে”। সব যেন পরিকল্পনা মতো। “শোন তুমি আমার বন্ধু বলেই আমি সাহায্য করছি, ১০ লাখ টাকা ম্যানেজ করো, আমি বুঝিয়ে মানাচ্ছি ওকে নইলে কিন্তু তোমার কপালে জেলের ভাত, মামলা পুলিশ, মেয়েরা চাইলে কিন্তু হাজারো মামলা করতে পারবে তোমার বিরুদ্ধে”।
অবশেষে ৭ লাখে ভালবাসা ও ৫৫ দিনের সংসারের অশুভ সমাপ্তি ঘটলো। মন্তু ফিরে এলো আইনজীবীর কাছে, আইনজীবীর অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এলো মেয়েটির এ ব্যবসার আরও কতক উদাহরণ ও মন্তুর মতো অযত্বে পাওয়া ভালবাসা খেলার আখ্যান। ওই ইরেগুলার বন্ধু ২ লাখ আর মেয়েটি ৫ লাখ নিয়ে নতুন বন্দরে ব্যবসার খোঁজে। ইরেগুলার বনধুটিকে আর মন্তুর পাশে দেখা যায়নি। ছেলেটি আইনের আশ্রয় নিতে চাইলো না, সে ভালবাসার মানুষটিকে হয়রানি করতে চাইলো না, নিরবে মানিয়ে গেল।
-ইরেগুলার বন্ধু হতে সাবধান। অন্ধ প্রেম হতে সাবধান নয় বাস্তব কাজে সাবধান। আইন জানুন সচেতন হোন।
লেখকঃ মতিউর রহমান ফয়সাল,আইনজীবী
Discussion about this post