একে.এম নাজিম, হাটহাজারী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন তথা উত্তর হাটহাজারীর প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র সরকারহাট বাজারের ঐতিহ্যবাহী পুকুর ভরাট বন্ধের জন্য দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। ৩ নং মির্জাপুর ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য সৈয়দ শাহিনুল হক(শাহেদ) ইউপি চেয়ারম্যানের সুপারিশ সহ এ আবেদন করেছে বলে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ।
জানা যায়, উক্ত বাজারে কানুনগো পুকুর নামে স্বরনাতীতকালের একটি পুকুর রয়েছে। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় পাশ্ববর্তী ঐতিহ্যবাহী তৎকালীন এক হিন্দু বিত্তশালী পরিবার জনস্বার্থে পুকুরটি খনন করেন। পুকুরের উত্তর পার্শ্বে রয়েছে মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব মসজিদ। মসজিদের মুসল্লিরা নামাজের পূর্বে অজুসহ শৌচকার্যে পুকুরের পানি ব্যবহার করত। এজন্য মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুকুরে একটি পাকা ঘাট ও নির্মাণ করেছিল। তাছাড়া বাজারের সহ¯্রাধীক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্টান নিজস্ব প্রয়োজনে পুকুরটি ব্যবহার করে আসছে। অন্যদিকে বাজারের আশাপাশে উত্তর ছাদেক নগর, কুমারীকুল, উত্তর মির্জাপুর, এনায়েতপুর, পেস্কারহাট, গুমানমর্দ্দন, বালুখালী, পাহাড়তলী, খিল্লাপাড়া, হাশিমনগর, জগন্নাথ পাড়া, খলিফাপাড়া, পশ্চিম পাহাড়তলী ও চারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন বাজারে আসলে প্রয়োজনের সময় পুকুরটি ব্যবহার করত। বাজার সহ আশাপাশে এলাকায় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে আগুন নিভাতে এ পুুকুরের পানি ব্যবহার করা হত। জনগুরুত্ব সম্পন্ন এ পুকুরটি একটি প্রভাবশালী মহল ব্যক্তিস্বার্থে বিগত জানুয়ারী মাস থেকে ভরাটের পাঁয়তারা শুরু করেছে। এরপূর্বে বিগত বছর দুয়েক পূর্বে কথিত প্রভাবশালী ব্যক্তি পাশ্ববর্তী কুমারী খালে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পুকুর ভরাটের পাঁয়তারা করলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ভরাট প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়। সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর কথিত প্রভাবশালী ব্যক্তি সাংবাদিক ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিকে নানা ভাবে হুমকি ধমকি প্রদান করে। বিগত জানুয়ারী মাসে এসকেবেটর দিয়ে পুকুর ভরাট প্রক্রিয়া শুরু করলে স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ শাহিনুল হক শাহেদ বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইনকে অবহিত করেন। তিনি বিষয়টি সরকারহাট ভূমি অফিসের তহশিলদার মোহাম্মদ ওবায়দুল আকবরকে ঘটনা সরোজমিন তদন্ত করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য টেলিফোনে আদেশ প্রদান করেন। তহশীলদার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ পেয়ে ঘটনা সরোজমিন তদন্ত করতে গিয়ে মোঃ রফিক সওদাগর, পিতা:মৃত আক্কল আলী, সাং আমিন হোসের তালুকদার বাড়ী, পারভেজ, পিতা : জয়নাল, সাং ইয়াকুব কন্ট্রাকটার বুড়ি পুকুর চারিয়া, হাটহাজারী পক্ষে আরব প্রোপ্রাবাটর লিঃ ইলিয়াছ (ডি.এ.এফ) নামক কোম্পানী কর্তৃক সরকার হতে কোন অনুমতি না নিয়ে উক্তপুকুর ভরাট করছেন। তাদেরকে পুকুর ভরাট না করার জন্য বলা হয়।তহশীলদার সরোজমিনে একটি মাটি কাটার ট্রাক্টর দেখা গেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। তাছাড়া উক্ত পুকুর বর্তমানে সরকারহাট বাজার, মসজিদ, মন্দির ও মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং জন বহুল এলাকার পুকুর হিসাবে থাকা খুবই দরকার, উক্ত পুকুর ভরাট হলে এলাকার ও মানুষের ক্ষতি হবে। এলাকাবাসীগণ পুকুর ভরাটের এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাই পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনের বলা হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারী এ তদন্ত প্রতিবেদন ইউনিয়ন ভ’মি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল আকবর,সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউ.পি চেয়ারম্যান বরাবরে প্রেরণ করেন। এরপর ও পুকুর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ না করে পুকুরে বহুতল ভবন নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার সৈয়দ শাহীনুল হক শাহেদ, ৩ নং মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রহিম উদ্দিন চৌধুরীর সুপারিশ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম এবং উপ পরিচালক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম এর বরাবরে গত ২১ মে আবেদন করেন। আবেদনে জরুরী ভিত্তিতে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তাছাড়া আবেদনের অনুলিপি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মহামুদ এম.পি, সচিব বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)বরাবরে প্রেরণ করা হয়।
Discussion about this post