বিডি ল নিউজঃ
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেল ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে। সাধারণ সম্পাদকসহ এ প্যানেল ১৩ টি পদ লাভ করে।
অপর দিকে সভাপতিসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে ৪ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারী শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হাসান এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
এ সময় নির্বাচন কমিশনের সদস্য এডভোকেট শ্যামল কান্তি চৌধুরী, মোঃ নুরুল হুদা, রাশেদুল ইসলাম, ফরিদ আহমদসহ বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে ১৭টি পদের অনুকুলে দুই প্যানেলে মোট ৩৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে ৮টি সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে ১৬ জন এবং ৯টি সদস্য পদের বিপরীতে ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর বাইরে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন একজন।
শনিবার সকাল ৯টা ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে বেলা ৩ টায় পর্যন্ত ভোট নেওয়ার সময় থাকলেও আর কোন ভোটার না থাকায় আড়াইটায় ভোট গ্রহণ শেষ করা হয়। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে গণনার কাজ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ফলাফল ঘোষিত হয়। মোট ৫৯০ ভোটারের মধ্যে ৫৪৮ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নির্বাচনে সভাপতি হিসাবে বিজয়ী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের এ্যাডভোকেট একে আহমদ হোসেন পেয়েছেন ২৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও সমমনা বিজ্ঞ আইনজীবিদের মনোনীত প্যানেল থেকে গত কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট ছৈয়দ আলম পেয়েছেন ২১৯ ভোট।
বিএনপি-জামায়াত প্যানেলের এ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক খান কায়সার ৩০২ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামীলীগ প্যানেলে এ্যাডভোকেট আ.জ.ম মঈন উদ্দিন পান ২৩৭ ভোট।
এ নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি পদে নির্বাচন করেন জেলা আওয়ামীলী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নুরুল ইসলাম। তিনি ৮২ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করেন।
এছাড়া বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলে সহ-সভাপতি পদে নুরুল মোর্শেদ আমিন (৩৩০ ভোট), মোহাম্মদ আবু তাহের-২ (২৩৬ ভোট), সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) পদে মোহাম্মদ এসতেফাজুর রহমান (৩৫০ ভোট), পাঠাগার সম্পাদক পদে মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন (৩২০ ভোট) ও আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নুরুল আজিম (২৯০ ভোট)। আর আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেলের শরীফ উদ্দীন টিপু ৩০২ ভোট পেয়ে সহ-সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) নির্বাচিত হন।
৯টি সদস্য পদের মধ্যে ৭টিতে বিএনপি-জামায়াতের প্যানেল জয়ী হয়। জয়ীরা হলেন- আকতার উদ্দিন হেলালী (৩২১ ভোট), রশিদুল আলম চৌধুরী (৩১২ ভোট), মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন (৩০৬ ভোট), রমিজ আহমদ (৩০২ ভোট), সৈয়দ ইরফান (২৯৪ ভোট), মোহাম্মদ দেলোয়ার আলম ( ২৮৫ ভোট), একেএম আতাউল হক ( ২৭৭ ভোট) নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে বাকী ২টি সদস্য পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়। প্যানেলের জয়ীরা হলেন- বদিউল আলম সিকদার ( ২৯১ ভোট) এবং নাহিদ হোসেন ( ২৮৮ ভোট)।
এ দিকে নির্বাচনের দিন সকালে থেকে আইনজীবী ভবনের মূল ফটকে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ভোটারদের স্বাগত জানান প্রার্থী ও সমর্থকেরা। ফাঁকে চলে সালাম ও ভোট প্রার্থনা। কোথাও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের একটি টীম কাজ করে। পাশাপাশি পদপ্রার্থীদের সমর্থকেরাও নির্বাচন সুষ্ট করতে কাজ করেছে। জেলা বারের বার্ষিক এ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার ছাড়াও প্রচুর দর্শক আদালতপাড়ায় ভীড় করতে দেখা গেছে।
গত ২০১৪ ও ২০১৫ বর্ষের নির্বাচনে সভাপতি পদসহ ৬টি পদে জয় লাভ করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদকসহ ১১টিতে আওয়ামীলীগ পন্থি প্যানেল জয়লাভ করে।
তবে সেবার জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্যানেলের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন হয়নি। এ কারণে কাঙ্খিত ফলাফল তাদের অর্জিত হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু সেই বারের শিক্ষাকে তারা কাজে লাগিয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছে। ফলও ওই রকম এসেছে। তবে সভাপতি পদটিও তাদের পাওয়া আশা থাকলেও আওয়ামীলীগের শেষ বেলার কৌশলে হারিয়ে যায় তারা। মাঠে পুরো প্যানেল জয়ের একটা আওয়াজ উঠলেও ফলাফলে সভাপতি পদটি আসেনি তাদের।
অন্যদিকে সভাপতি পদে আওয়ামীলীগের প্রার্থী জয়ী হলেও পুরো প্যানেলে তারা ধরাশায়ী হয়েছেন। এ জন্য সভাপতি পদে বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলীয় কোন্দলকে অনেকে দায়ী করেছেন। যদিওবা জেলা আওয়ামীলী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নুরুল ইসলাম নিজেকে বিদ্রোহী নয় দাবী করেছেন।
প্রসঙ্গত, জেলা আইনজীবী সমিতি ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৮১ জন।
উৎস-কক্সবাজার নিউজ
Discussion about this post