কুবি প্রতিনিধিঃকুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দু’সপ্তাহে যাবৎ ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ফলে অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন । একের পর এক বিভিন্ন বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে,এতে সেশনজড় প্রকট আকার ধারণ করছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে শিক্ষক সমিতির সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, সিন্ডিকেট সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন মহলের নেতৃবৃন্দ, তবে এ পর্যন্ত কোন ধরনের সমঝোতায় পৌছাতে পারেনি । শিক্ষকদের আন্দোলন কবে নাগাদ প্রত্যাহার হতে পারে, কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারছেনা । শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য থেকেও রক্ষা পাচ্ছেন না আন্দোলনকারী শিক্ষকগণ ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু শিক্ষার্থী বিডি ল নিউজ কে বলেন, ‘ শিক্ষকগণ হচ্ছে জাতি গড়ার কারিগর, কিন্তু শিক্ষকগণ আমাদের জিম্মি করে তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন ।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম,এখানে অনেক গরিব ঘরের সন্তান পড়ালেখা করে, কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনে আমাদের সে আশা তিমিরে যাচ্ছে । শিক্ষকগণ দাবি করে আমরা তাদের সন্তান তুল্য কিন্তু কোন বাবা-মা কি তার সন্তানদের ক্ষতি করতে পারে? শিক্ষকদের প্রতি আমাদের প্রশ্ন রইল ।’
শিক্ষকদের আন্দলনের প্রতিবাদে ক্লাস পরীক্ষার চালুর দাবিতে গত ১০দিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থী আন্দোলন করে আসছে ।এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের দশম কার্যদিবসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলায় এক সমাবেশে ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে শিক্ষক সমিতিকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটামও দেয় আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থী পরিষদ ও শাখা ছাত্রলীগ। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রক্টর ও বঙ্গবন্ধু পরিষদকে অনুলিপি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। তবে শিক্ষক সমিতি শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নূরুল করিম চৌধুরী বিডি ল নিউজ কে জানান, ‘শিক্ষকদের টানা দশ কার্যদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ৩২টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে ।’অনদিকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশের সভাপতি দুলাল চন্দ্র নন্দী ও সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক সমিতিকে ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর আহ্বান জানায়।এদিকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশের ৬১ জন শিক্ষক নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় জিডি করেন।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: আবু তাহের বিডি ল নিউজ কে বলেন, ‘আগামীকাল রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবির মধ্যে অন্তত দুই শিক্ষকের বাসায় হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা , ইংরেজি বিভাগের প্রধানকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি, লোকপ্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষককে তাঁর স্ত্রীর সামনে নাজেহালকারী ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার, তদন্ত কমিটিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে অন্তর্ভুক্তি করা হলে ঐ দিন দুপুর ২টার সময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ বৈঠকে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আলী আশরাফ গণমাধ্যম কে বলেন, ‘ ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়েছি । শিক্ষকদের দাবির অধিকাংশই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এবং সেই হিসেবে কাজও হচ্ছে। কিন্তু তারা একটি বিষয় সমাধানের দ্বারপ্রান্তে চলে আসতেই নতুন আরেকটি দাবী উত্থাপন করেন। যার ফলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। আমি আবারও চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যেতে আমি শিক্ষক সমিতিকে অনুরোধ করছি । ’
প্রসঙ্গত, ৬ দফা দাবিতে ১৯ জানুয়ারি থেকে ক্লাস ও ২২ জানুয়ারি থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আসছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি । অপরদিকে ২২ জানুয়ারি থেকে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ।
Discussion about this post