- জরুরি বিষয়ে শুনানি করাও দুরূহ।
- আদালতগুলোতে মামলার স্তূপ।
- আদেশ লিখতে জজদের বন্ধের দিনেও রাত-দিন কাজ করতে হয়
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের আদালতগুলোতে তীব্র বিচারক সংকটের কারণে বিচার কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ফলে বিচারপ্রার্থীদের ব্যাপক ভোগান্তির পাশাপাশি ন্যায়বিচার লাভের প্রত্যাশা পূরণে অযাচিত বিলম্ব হচ্ছে। জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৪/১৫টি গুরুত্বপূর্ণ আদালতে বিচারক সংকটের কারণে বিচারপ্রার্থী মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম আদালতের একাধিক সিনিয়র আইনজীবী ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা জজ মিলিয়ে সর্বমোট ৩২ থানায় দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলার জন্য যেখানে থানাভিত্তিক পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ প্রয়োজন সেখানে বিদ্যমান আদালতেই দীর্ঘদিন যাবত্ প্রায় ১৪ জন বিচারক নেই। ফলে আদালতগুলোতে মামলার স্তূপ আরো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। হাজার হাজার মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিচারকরা প্রতিনিয়তই হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে জরুরি বিষয়ে শুনানি করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়েছে। আদেশ লিখতে বিভিন্ন আদালতের জজদের সরকারি ছুটি বা বন্ধের দিনও রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে। চার্জ কোর্টসমূহ শুনানি মুলতবি ও টাইম পিটিশন মঞ্জুর ও পরবর্তী তারিখ ধার্য করেই কাজ শেষ করছে। এতে মোকদ্দমা দীর্ঘায়িত হওয়ায় মামলাবাজ চক্র প্রচুর লাভবান হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ) চট্টগ্রাম শাখার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত দুই বছর ধরে নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালতে বিচারক নেই। বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে জজ নেই দীর্ঘ ১ বছর যাবত্। ফলে দ্রুত বিচার লাভের প্রত্যাশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। সরকারি-আধা সরকারি চাকরি সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তির জন্য গঠিত প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে (চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) বিচারক নেই প্রায় দেড় বছর ধরে। বিভাগীয় দু’টি শ্রম আদালত দীর্ঘদিন ধরে বিচারকশূন্য অবস্থায় রয়েছে। গত এক মাস ধরে মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারক নেই। ফলে ভারপ্রাপ্ত আদালতের রিভিশনাল এখতিয়ার না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
একই অবস্থা বিরাজ করছে যুগ্ম মহানগর দায়রা ১ম আদালতে। এই আদালতে জজ নেই দীর্ঘ ৩ মাস যাবত্। মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ৩ নং আদালতে বিচারক নেই প্রায় এক মাস যাবত্। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ ও ৩ এ বিচারক নেই প্রায় ৬ মাস। সবচেয়ে করুণ অবস্থা নারী ও শিশুদের অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ দাম্পত্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সৃষ্ট আদালত পারিবারিক আদালত-১ এ। এই আদালতে বিচারক নেই প্রায় ১ বছর থেকে। একটি পারিবারিক আদালত অপর আদালতের চার্জে থাকায় কোর্ট নিজের মামলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছে এবং শুধু মামলার তারিখই পড়ছে। পারিবারিক আদালতে নিজস্ব বিচারক নেই। চট্টগ্রাম জেলা ও নগরীর ৩২ থানা এলাকার জন্য ২টি পারিবারিক আদালত, তাও সিনিয়র সহকারী জজে এসব মামলা হয়। নিজস্ব পারিবারিক আদালত বা জজ নেই। সহকারী জজ দিয়েই এসব আদালত চালানো হয়। সহকারী ৩য় আদালত সদর চট্টগ্রামেও বিচারক নেই দীর্ঘদিন। এছাড়া পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া আদালতের অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতসমূহও দীর্ঘদিন যাবত্ বিচারকশূন্য হয়ে পড়ে আছে।
চট্টগ্রামের ৩২টি থানা এলাকার জন্য ইতিপূর্বে ৪টি অর্থ ঋণ আদালত থাকলেও বর্তমানে শুধু একটি মাত্র আদালত কাজ করছে। ফলে ঋণ খেলাপিদের পোয়াবারো হয়েছে।
মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান অবিলম্বে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের শূন্য আদালতসমূহে বিচারক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে ইত্তেফাককে বলেন, বিচারক ও আদালত কর্মকর্তা কর্মচারী সংকটের কারণে বিচার কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
– ইত্তেফাক থেকে সংগ্রহ করেছেন মিহির মিশকাত।
Discussion about this post