কিন্তু এ বছরের জানুয়ারিতে একরামকে ‘অপহরণ’ করে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেয় স্থানীয় পাচারকারীরা। পরে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আটকে রেখে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। এরপরও ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়নি পাচারকারী চক্র।
উল্টো ছেলের খোঁজে গেলে পাচারকারীরা বিধবাকে পিটিয়ে হাড় ভেঙে দিয়েছে। এরপরও ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় গিয়েছিলেন পুলিশের সহায়তা নিতে। কিন্তু বিধিবাম মানবপাচারকারী দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে উল্টো ‘ডাকাতি’ মামলার আসামি হতে হয়েছে ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধাকে।
আর নাড়ি ছেঁড়া ধন ‘অপহৃত’ ছেলের সন্ধান পেতে ঘুরছেন আদালতের বারান্দায় বারান্দায়। উদ্ধার হওয়া মালয়েশিয়াগামীদের মাঝেও খুঁজে ফিরছেন ছেলেকে। কিন্তু নির্বিকার পুলিশ বলছে শুধু তদন্তের কথা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিধবা শামসুন্নাহার বেগম সাংবাদিকদের জানান, স্বামী হাসান আহমদ মারা যাওয়ার পর একমাত্র সন্তান একরামকে নিয়ে বাচাঁর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু গত জানুয়ারিতে ছেলেকে অপহরণ করে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেয় স্থানীয় একটি দালাল চক্র।
‘থাইল্যান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে দাবি করা হয় মুক্তিপণ। ছেলেকে বাঁচাতে ভিটে-মাটি বিক্রি ও ধার-দেনা করে তিন লাখ টাকা তুলে দিয়েছে স্থানীয় দালাল রফিক ও মোকতার আহমদের হাতে। কিন্তু প্রত্যাশিত টাকা পাওয়ার পরও ফেরত পাইনি ছেলেকে। এরমধ্যে দালাল চক্রের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে,’ বলেন তিনি।
বলেন, ‘নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পেতে হন্য হয়ে খোঁজছি মুক্তিপণের টাকা আদায়কারী দালালদের। গত ২ মে কক্সবাজার শহরের থানার পেছনের এমএস গেস্ট কেয়ারে গিয়ে দেখা পাই দালাল রফিকের। শত অনুনয় করি ছেলের অবস্থান জানাতে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দালাল রফিক বেধড়ক মারধর করে আমার হাত ভেঙে দিয়েছে।’
‘ওইদিন সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর থানায় অভিযোগ করি। কিন্তু অভিযোগ পেয়েও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ,’ যোগ করেন এই বিধবা।
মুক্তিপনের টাকা আদায়কারী রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই বিধবার অনুরোধে তিনি দুই লাখ টাকা নিয়ে টেকনাফের মৌলভী ছৈয়দের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন। এর বেশি কিছু জানি না।
কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিপণ আদায় পরের ঘটনা। আগে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তদের বাড়ি উখিয়া উপজেলায়। আইন অনুযায়ী সেখানেই মামলা হবে।
এদিকে শামসুন্নাহার জানান, তার অনুপস্থিতিতে এরইমধ্যে বাড়িতে কয়েক দফা পুলিশে গিয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন- তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় একটি মামলা আছে।
ডাকাতির ঘটনায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। আর এজন্য তাকে গ্রেফতার করতে এসেছিল পুলিশ।
এ বিষয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম বলেন, বিধবা শামসুন্নাহারের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলার বিষয়টি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। বৃদ্ধার খবর নিতেই কোনো কর্মকর্তা বাড়িতে গিয়েছেন।
এদিকে বৃদ্ধা উখিয়ায় থানায় অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) তোফায়েল আহমেদ।
Discussion about this post