বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ অধ্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আইনী বিধান রয়েছে। সংবিধানের ধারা ১০০-এর বিধান অনুযায়ী রাজধানীর রমনায় সুপ্রীম কোর্ট অবস্থিত। এটা সচরাচর হাইকোর্ট নামে পরিচিত; কারণ ১৯৭১ সালের পূর্বে এই ভবনে পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
কাঠামো
বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৯৪ ধারায় সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আইনী বিধান ব্যাক্ত করা হয়েছে। এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট” নামে বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকিবে এবং আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ লইয়া তাহা গঠিত হইবে। এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “প্রধান বিচারপতি এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন বোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রীম কোর্ট গঠিত হইবে”; আরো বলা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি “বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি” নামে অভিহিত হইবেন। পরবর্তী অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি ও আপীল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ কেবল উক্ত বিভাগে এবং অন্যান্য বিচারক কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করিবেন।”; এবং চতুর্থ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারক বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন।”
সংবিধানের ধারা-১০০-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী আসন অবস্থিত হবে। তবে বিধান আছে যে, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ক্রমে প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে পারবে।
এখতিয়ার
সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট-এর দুটি বিভাগ আছেঃ আপীল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ। সংবিধানের ১০১ ধারায় হাইকোর্টের এখতিয়ার বর্ণিত আছে, ১০৩ ধারায় আপীল বিভাগের এখতিয়ার বর্ণিত আছে। হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালত এবং ট্রাইবুনাল থেকে আপিল শুনানি করে থাকে।
এছাড়াও, বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১০২ এর অধীনে রিট আবেদন , এবং কোম্পানী এবং সেনাবিভাগ বিষয় হিসেবে নির্দিষ্ট সীমিত ক্ষেত্রে, মূল এখতিয়ার আছে। হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আপিল শুনানির এখতিয়ার রয়েছে আপিল বিভাগের। সুপ্রিম কোর্টের নির্বাহী শাখার স্বাধীন, এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে আদেশ দিতে পারে।
বেঞ্চ গঠন
এক বা একাধিক বিচারক সমন্বয়ে প্রধান বিচার পতি হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করেন।
বিচারপতি নিয়োগ
প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতিরা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাধ্যতামূলক পরামর্শ সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে প্রথমে দুই বছর প্রাথমিক ভাবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নিবন্ধিত হয়ে উকিলতি করা এবং সংবিধানের ৯৮ বিধানের অধীনে জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত অতিরিক্ত বিচারক। বর্তমানে এই অনুপাত হচ্ছে ৮০% – ২০%। এই সময়ের সফল সমাপ্তির পরে এবং প্রধান বিচারপতি কর্তৃক সুপারিশের উপর একজন অতিরিক্ত জজকে সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি স্থায়ী নিয়োগ দেন। আপিল বিভাগের বিচারক একই বিধান অধীন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত করা হয়। সব ধরনের নিয়োগ সংবিধানের ১৪৮ এর বিধান অনুযায়ী শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক ৬৭ বছর পর্যন্ত সংবিধানের বিধান (তের) দ্বারা বর্ধিত হিসাবে সে/তিনি বিচারপতি থাকবেন সংশোধনী আইন ২০০৪ (২০০৪ এর ১৪)।
সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি
২০১৭ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে ৯২ জন বিচারপতি কর্মরত। তাদের মধ্যে ৭ জন আপীল বিভাগে এবং ৮৫ জন হাইকোর্ট বিভাগে। হাইকোর্টে কর্মরত সবাই স্থায়ী বিচারপতি।
Discussion about this post