একে.এম নাজিম, হাটহাজারী চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার সময়ে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। হাটহাজারী, রাউজান দুই উপজেলার সীমানা নির্ধারনকারী হালদা নদীর তীরবর্তী এলাকার মৎসজীবি ও ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা ও ডিম আহরনের সরঞ্জাম নিয়ে হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহের জন্য নেমে পড়ে সোমবার দুপুর তিনটারদিকে নদীতে মাছের ডিমের নমুনা দেখা দিলে ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদীর দিকে নজর রাখে। সোমবার শেষ রাতের দিকে মেঘের গর্জন মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল বিহীন এই ডিম ছাড়ে।
জানা যায়, সোমবার দিনের বেলা নমুনা দেখা গেলেও দিবাগত রাত মা মাছ পুরো দমে ডিম ছাড়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর নদীতে জোয়ারের পানির ¯্রােতে অংকুরীঘোনা, কান্তার আলী হাট, নতুনহাট, সিপাইর ঘাট, রামদাশ হাট, মুন্সীরহাট, বাড়ীয়াঘোনা, মাদারী খালের মুখ, পাথাইজ্জার টেক, আমতোয়া, কাগতিয়ার চর, পোড়া কপালীর মুখ, মাছুয়াঘোনা, কাসেম নগর, মোবারক খীল, আজিমের ঘাট, দক্ষিন গহিরা পশ্চিম গহিরা, আবুর খীল, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম বিনাজুরী, উরকির চর, নাপিতের ঘাট, গড়দুয়ারা, মার্দাশা এলাকায় মৎসজীবি ও ডিম সংগ্রহকারীরা প্রথমে কিছু কিছু ডিমের নমুনা দেখতে পান। এ সময় ডিম আহরনকারীরা বুঝতে পারে মাছে ডিম ছাড়বে। জোয়ার শেষে মধ্য রাতে ভাটা শুরু হলে নদীর ঢলের ¯্রােতের পানিতে ডিম ছাড়ে। এই সময় মৎসজীবি ও ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদীতে নৌকাসহ ডিম আহরনের সরঞ্জাম নিয়ে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেন সোমবার দিবাগত রাতে হালদা নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাইশ ও কার্প জাতীয় মা মাছ ব্যাপক হারে ডিম ছাড়ে । ডিম ছাড়ার আলামত দেখে আহরনকারীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। গতকাল নয়াহাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার জুড়ে ডিম আহরনের উৎসব চলে। রাউজানের আজিমের ঘাট, কাসেম নগর, হাটহাজারীর আমতোয়া. নাপিতের ঘাট এলাকায় আনুমানিক ৩শতাধীক নৌকা ও ডিম আহরনের মশারী জাল দিয়ে তিন হাজার কেজি সমপরিমাণ মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেন বলে জানা যায় গেছে। মা মাছের ডিম সংগ্রহের পর মৎসজীবি ও ডিম সংগ্রহকারীরা অধিকাংশ সনাতন পদ্বতিতে নদীর তীরে মাটির কুয়ায় কেউ কেউ মৎস্য অধিদপ্তরের স্থাপিত হ্যাচারীতে সংগ্রহ করা ডিম থেকে রেনু ফুটানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ।
স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা জানায়, হালদা নদীতে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করার পর ডিম ফুটানোর জন্য সরকারী হ্যাচারীগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে । তবে সিপাহীর ঘাট এলাকায় প্রথম মৎস্য হ্যাচারী সরকারী ভাবে বিগত ২৫ বছর পূর্বে নির্মান করা হলেও বর্তমানে এই হ্যাচারী প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম থেকে পোনা ফোটানো তাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে পোনা ফুটানো হলেও পোনা নষ্ট হওয়ার আশংকা করছে স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা। ডিম সংগ্রহকারী মোঃ নুরুল হুদা সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, মৎস্য অফিসার এই সব হ্যাচারী গুলো নিয়ে কোন তদারকি করে না। গতকাল সাংবাদিকরা সরেজমিনে গিয়ে দেখে হ্যাচারী গুলো অযতেœ-অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। হ্যাচারী গুলোর উপরে টিন শেড গুলো বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ডিম আহরণকারীরা এখন ডিম থেকে পোনা ফুটানো কাজে সীমাহীন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তবে কৃত্রিম রেণু পোনা ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠেছে বলেও প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ। ডিম ছাড়ার সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও নিরাপদে ডিম আহরণকারী নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করেছে। বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিকে এ ডিমের পোনা দ্রুত বর্ধনশীল বলে বর্তমানে ডিমের চাহিদা বেশী হবে। কৃত্রিম রেনু পোনার ব্যাপারে সজাগ থাকার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিজ্ঞ মহল। ডিম সংগ্রহকারী জানান আগামী আমাবষশ্যা তিথিতে আরেক দফা ডিম ছাড়তে পারে বলে ডিম সংগ্রহকারী জানান। হালদা নদীতে সর্বমোট ৩শতাদিক নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা হালদায় নামে । পানি সহ মোট ৯ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করে। মূলত ডিমের পরিমাণ ২২৫ কেজি হবে বলে জানায় ডিম সংগ্রহকারীরা।
ছবির ক্যাপশনঃ হালদা নদী থেকে ডিম আহরণ করছে ডিম সংগ্রহকারীরা, অযতেœ পড়ে আছে সরকারী হ্যাচারী গুলো।
Discussion about this post