২০১৫ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ৬৮ শতাংশ আসামি খালাস পেয়েছেন। সাজা হয়েছে ৩২ শতাংশের। সংস্থার ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় ২০১৫ সালে খালাস পাওয়া আসামির সংখ্যা ১০ শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দুদকের মামলাগুলো মূলত নথিনির্ভর। তাই সঠিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নথিপত্র উপস্থাপন করতে পারলে ওই সব অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব। কিন্তু আইনগত দুর্বলতা, নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট না থাকা, ফি-নির্ভর আইনজীবীদের প্রতি নির্ভরতা, দুর্বল অনুসন্ধান ও তদন্ত এবং আপসকামিতার কারণে দুদক দুর্নীতি মামলার চূড়ান্ত বিচারে হেরে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
গত সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে জমা দেওয়া দুদকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫ সালে দুদকের ৩০৬টি মামলা বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে মাত্র ৯৯টি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ২০৭টি মামলার আসামি।
অন্যদিকে ২০১৪ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ২৪৩টি মামলার মধ্যে ১০১টিতে আসামিদের সাজা হয়েছে। আর ১৪২টি মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। ওই বছর ৫৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, গত সাত বছরে নিম্ন আদালতে মোট ২ হাজার ৭৭টি দুর্নীতির মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। এতে মাত্র ৮৬২টি মামলায় সাজা হয়েছে। উচ্চ আদালতে গিয়ে এ সংখ্যা আরও কমে যাচ্ছে।
কমিশন প্রতিষ্ঠার পর ২০০৯ সালে সাজার হার ছিল সবচেয়ে বেশি—৬১ শতাংশ। এরপর ২০১০ সালে সাজার হার কমে ৫৬ শতাংশ, ২০১১ সালে ২০ শতাংশ, ২০১২ সালে ৩২ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৩৭ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৪২ ও ২০১৫ সালে ৩২ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে।
অধিকসংখ্যক মামলায় আসামিদের খালাস পেয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল গতকাল বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের নিজেদের কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে, বাইরের কিছু কারণও থাকতে পারে। সেগুলো চিহ্নিত করে আমাদের করণীয় কী সেটি আমরা দেখছি।’
দুদক সচিব বলেন, অনেক সময় দেখা গেছে এজাহারে দুর্বলতা থাকতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্রের কারণে আসামিরা পার পেয়ে যান। অনেক সময় পর্যাপ্ত আলামত সংগ্রহ না করায় মামলায় হারতে হয়। আইনজীবীদের ঘাটতিও থাকতে পারে। আবার মনিটরিংয়ের ঘাটতিও থাকতে পারে।
দুদক সচিব বলেন, ইতিমধ্যে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী প্যানেলে নতুন আইনজীবী এসেছেন, কেউ কেউ বাদ পড়েছেন। এর ফলে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সাজার হার বেড়ে ৪৯ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগও নেওয়া হচ্ছে কম
২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ওই বছরে মোট ১০ হাজার ৪১৫টি দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। যাচাই-বাছাই শেষে ১ হাজার ২৪০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। তার আগের বছর ২০১৪ সালে অভিযোগ জমা পড়েছিল ১২ হাজার ৫০০, যেখান থেকে ১ হাজার ৬৮৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে এসে (আগস্ট পর্যন্ত) অভিযোগ জমা পড়েছে ৭ হাজার ৯৩৮টি। ওখান থেকে মাত্র ৫৭১টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য বাছাই করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি বিরোধী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির মামলাগুলোর সাফল্য এককভাবে দুদকের ওপর নির্ভর করে না। বিচারিক প্রক্রিয়ায় যেসব অংশীজন রয়েছে, তারা কতোটা দুদককে সহায়তা করছে, কিংবা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে, তার ওপরে নির্ভর করে। সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post