টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সেলিম মিয়া ওরফে শেখ সোয়েবের বিরুদ্ধে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগসহ দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে উক্ত পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা ছাত্রলীগের নির্দেশে উপজেলা ছাত্রলীগের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দেলদুয়ার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ‘আটিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোয়েবের বিরুদ্ধে নারী ধর্ষণসহ দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ থাকায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ অসত্য প্রমাণ করতে পারলে জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগ ইচ্ছে করলে তাকে পূণরায় দলের অন্তর্ভূক্ত করতে পারে। তবে অভিযোগ সত্য প্রমাণ হলে দলে ফেরার কোনও সুযোগ নেই। এ ধরনের কাজে লিপ্ত থাকা নেতাকর্মীদের স্থান ছাত্রলীগে নেই।’
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ১৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে ধর্ষণের শিকার ওই নারী সংবাদ সম্মেলনের মাধমে এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই নারী বলেন, ‘গত ৮ সেপ্টম্বর সোয়েব ও তার এক সহযোগী শিপন আশেকপুর গোডাউন ব্রীজ সংলগ্ন বাসায় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় সে ডাক-চিৎকার শুরু করলে তার হাত ও মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে সোয়েব। আর এই ধর্ষণের ভিডিও চিত্র শিপন তার মোবাইলে ধারণ করে। পরে তারা চলে যাওয়ার সময় ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে কিছু না বলার জন্য বিভিন্ন হুমকি দেয়। তা না হলে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানায়।’
পরে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ধর্ষণের শিকার ওই নারী। পরে ১১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে সে বাদী হয়ে সোয়েবকে প্রধান আসামি ও বন্ধু শিপনকে আসামি করে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনতে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা সোয়েব এ ঘটনাটিকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবিতে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তার অভিযোগ, তাকে মিথ্যে মামলা দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে। এমনকি রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।
সোয়েব বলেন, ‘২০১৬ সালে দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া মাজার প্রাঙ্গণে একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই মেলা পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে ছিলাম আমি। ওই মেলায় ৭দিন হোটেল ব্যবসা করার জন্য একটি দোকান নেয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আশেকপুরের ওই নারী। মেলায় দোকান করার সুবাদে সে সময় আমার সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় হয়। তবে সেটা ছিল মেলা কর্তৃপক্ষ আর ব্যবসায়ীক সম্পর্ক। এই মেলায় হোটেল করার সময় ওই নারী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বাকিতে নেয়। তবে সেই পাওনা টাকা পরিশোধ না করে মেলায় মাত্র ৪ দিন দোকান করে পালিয়ে আসে ওই নারী। মেলা পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ওই নারীর কাছে পাওনা টাকা আদায় করে দেওয়ার জন্য বিচার নিয়ে আসেন। ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য আমি ওই নারীকে চাপ দেই। এ নিয়ে আমার সঙ্গে ওই নারীর কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। আমি যাতে ওই নারীকে পাওনা টাকার জন্য আর চাপ দিতে না পারি সে জন্য ও আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ওই নারী আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন।
Discussion about this post