সেদিন এক ফার্মেসিতে ঔষধ কেনার জন্য গিয়েছিলাম । কিছুক্ষনের মধ্যেই অনেকজন রোগীকে দেখলাম মন্টেলুকাস্ট জাতীয় ঔষধ কিনতে । সবাই চলে যাওয়ার পর ফার্মেসিতে আমি জিজ্ঞেস করলাম এত মন্টেলুকাস্ট জাতীয় ঔষধ বিক্রি হয় ? তিনি আমাকে খুব ভয়াবহ একটি তথ্য দিলেন । শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় বেশীর মানুষের প্রেসক্রিপশনেই এন্টিবায়োটিকের পরে এই মন্টেলুকাস্ট জাতীয় ঔষধটির নাম থাকে !
কারণ একটিই বেশির ভাগ মানুষই এখন শ্বাস নালীর প্রদাহে আক্রান্ত । এর জন্য দায়ী বাতাসে ধুলোর পরিমানের সাথে সাথে দুষকের মাত্রা অতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়া !
যদি কোন কারণে রাস্তায় চলার সময় একটু খেয়াল করে দেখেন দেখা যাবে অধিকাংশ রাস্তাগুলোতেই ধুলির জন্য একটু দূরেই স্পষ্টভাবে দেখা যায় না । এত গেল চোখের দেখা । কিন্তু যেটা সবচেয়ে বেশী উদ্বেগজনক তা হল বাতাসে ভারী পার্টিকেলের সংখ্যা স্ট্যান্ডার্ড মানের চেয়েও অনেক বেশী ।
২০০৫ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর গৃহীত ‘ন্যাশনাল এমবিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড’ (এনএএকিউএস) বা বাতাসের মান পরীক্ষার জাতীয় মানদণ্ড অনুসারে, বাতাসে নাইট্রোজেন অক্সাইডের মাত্রা ৫৩পিপিবির (পার্টিকেলস পার বিলিয়ন) নিচে হলে সেই বাতাস সাধারনত মানুষের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়।
অন্যদিকে, বাতাসে ‘পার্টিকেল ম্যাটার’ বা অতি ক্ষুদ্রকণা পিএম২.৫-এর মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম থাকা উচিত। তবে গত কয়েক বছরে এই মাত্রা শহর এবং উপশহরের কোন কোন জায়গায় নিরাপদ সীমা ছাড়িয়ে গেছে ! বিশেষজ্ঞদের মতে, পিএম২.৫-এর অনিরাপদ মাত্রাই শ্বাসকষ্ট রোগের প্রধান কারণ।
সেক্ষেত্রে ধুলি দূষনের কারণ নিরুপন পূর্বক ব্যবস্থা নিতে গেলে অনেকগুলো কারণ বের হয়ে আসবে । রাস্তার ধুলি নিয়ন্ত্রনের জন্য অবশ্যই যে ব্যপারটি প্রথম আসবে তা হল পরিস্কার রাস্তা থাকার নিশ্চয়তা । রাস্তার মেরামত কাজের সময় সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে মেরামত করার পর যদি চলাচলের জন্যে খুলে দেওয়া হয় তবে কিছুটা সমাধানে আসতে পারে । রাস্তার পাশে ঘাসের গালিচা নির্মাণ এবং সেখানে ফোয়ারার মাধ্যমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলেও ধুলো কমে আসবে অনেক । তবে রাস্তা প্রতিদিন নিয়ম করে পরিস্কারের কোন বিকল্প নেই ।
সরকারের এই দিকটায় খুব বেশী গুরুত্ব দিতে হবে এখন । প্রয়োজনে প্রতি কিলোমিটারে নির্দিষ্ট সংখ্যক হারের চেয়েও বেশী ক্লিনার নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে । সামগ্রিক দূষণের সাথে ধুলো দুষণের এ বিস্তার সত্যিই খুব উদ্বেগ তৈরী করে দিচ্ছে আমাদের ।
শিশুরা এবং বৃদ্ধরা যেভাবে শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে তাতে ফুসফুসের সংক্রমন আরও বাড়বে এবং এ থেকে হৃদরোগের ঝুকিও বাড়তে থাকবে যা অদূর ভবিষ্যতে আমাদের মত দেশের জন্য ভয়াবহ স্বাস্থ ঝুকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ।
সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে ধুলি দূষণ বন্ধে আমাদের কাজ করতে হবে । সবুজ রাস্তার জন্য ঘাস ও বৃক্ষরোপন বাড়াতে হবে এবং পরিস্কার রাখার জন্য পর্যাপ্ত কাজ করতে হবে ।
সাধারণ মানুষেরও আরও বেশী সচেতন হতে হবে অনেক । আশা করি সবাই গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উদ্যোগী হবেন ।
Discussion about this post