নারীদের জন্য নিরাপদ চলাচল পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল প্রতিষ্ঠা করুন
একে.এম নাজিম, হাটহাজারী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখের নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে নারী সমাজের উপর সংঘবদ্ধ যৌন-নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গতকাল (শনিবার) সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে পহেলা বৈশাখ যে বর্বরোচিত কায়দায় নারীদের বস্ত্রহরণসহ যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, তা কতটা জঘন্য ও বর্বরোচিত বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জাতি হিসেবে আমরা গভীরভাবে লজ্জিত ও মর্মাহত। প্রশাসনের প্রতি আমি জোর দাবী জানাচ্ছি, অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা রোধে বাস্তবসম্মত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুন।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর বলেন, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের উত্থাপিত ১৩ দফার অন্যতম দাবী ছিল, “দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নারী জাতির সার্বিক উন্নতির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবি নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-বাইরে ও কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-আব্রু ও যৌন হয়রানী থেকে বেঁচে থাকার সহায়ক হিসেবে পোষাক ও বেশভূষায় শালীনতা প্রকাশ ও হিজাব পালনে উদ্বুব্ধকরণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এবং একই লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সকল প্রকার বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন মেলামেশা, নারী-নির্যাতন, যৌন হয়রানী, নারীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার সহিংসতা, যৌতুকপ্রথাসহ যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে”। তিনি বলেন, নারীদের স্বার্থরক্ষাকারী এই দাবী বাস্তবায়নের সহজ উপায় সম্পর্কে বলেছিলাম, “নারীদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবি নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করার বিষয় মৌলিক অধিকারের অংশ। এসব বিষয়ে সরকার নারীদের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল নির্ধারণ, কর্মস্থলের নিরাপত্তার জন্য বিধি তৈরী এবং ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই শালীন পোষাক পরিধান ও হিজাব পরার ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করতে পারে। একইভাবে অনাচার, ব্যভিচারসহ নারী পুরুষের অবাধে মেলামেশা বন্ধে নির্দেশনা জারি করতে পারে। ঘরের বাইরে জনসমাগমে, চলাচলের পথে, টেলিভিশন-সিনেমায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও কর্মজীবী নারীদের জন্য যৌনউদ্দিপনা তৈরী করে না এমন পোষাক-বিধি জারি করা যেতে পারে ইত্যাদি। তাছাড়া ধূমপানে অনুৎসাহিতকরণের মত পর্দা বা হিজাব পালনে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য সরকারীভাবে বিভিন্ন প্রচারণামূলক প্রকল্প চালু করা যায়”। তিনি বলেন, হেফাজতের এই দাবী যদি বাস্তবায়ন করা হতো, পহেলা বৈশাখে আমাদের মা, বোন ও কন্যাদের উপর কিছু নরপশুর এভাবে নিপীড়িন চালানোর সুযোগ তৈরী হতো না।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর বলেন, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক অবস্থান থেকেই হেফাজতে ইসলাম ঈমান-আক্বিদা’র সুরক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির স্বার্থে আন্দোলন চালাচ্ছে। এর বাইরে আমাদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বা ভিন্ন কোন স্বার্থ যে নেই, তা জাতির সামনে পরিস্কার। দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারের প্রতি আমি আবারো উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের মা, বোন ও কন্যাদের মর্যাদা, সম্মান রক্ষা এবং সর্বক্ষেত্রে নারীদের নিরাপদ পরিবেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের দাবী মেনে নিয়ে বাস্তবায়ন করুন।
তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার নামে দেশে দৃশ্যতঃ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আদর্শিকভাবে জাতিকে ধর্মহীন করার উদ্যোগই চলছে। বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে ইসলামি শিক্ষাকে সংকোচিত করা হয়েছে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানসহ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পৌত্তলিক কালচার, বেহায়াপনা ও নগ্নপনা এখন রীতি হয়ে ওঠছে। ঘরে, বাইরে, রাস্তায়, মার্কেটে, জনমাগমে, টেলিভিশন, সিনেমায় সর্বত্রই এখন ভোগ-বিলাসিতা ও যৌনউদ্দীপক আচরণের ছড়াছড়ি। কথায় কথায় উলামা-মাশায়েখ, ইসলামী শিক্ষা এবং দাড়ি-টুপী ও হিজাবধারীদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, কটূক্তি, অপবাদ ও হেয়প্রতিপন্না করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবেই। এসবের কুফল যে কতটা ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে, পহেলা বৈশাখের ঘটনায় আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে।
পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রসঙ্গ টেনে হেফাজত আমীর বলেন, মুসলমানদের বিশ্বাস মতে ভাল-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল সব কিছুই আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। আমাদের ভাল, কল্যণ ও মঙ্গল কামনা করতে হবে আল্লাহর কাছেই। কিন্তু নববর্ষ বরণের নামে ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে বাঘ, ভাল্লুক, সাপ-কুমির এবং রাম-হনুমানের বিশাল বিশাল মূর্তি ও মুখোশ নিয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার মুসলমান নারী-পুরুষের কথিত মঙ্গল শোভাযাত্রা ঈমান-আক্বিদা ও ইসলামী আদর্শের ঘোরতর বিরোধী। বিবৃতিতে হেফাজত আমীর অবিলম্বে ঈমান বিরোধী শিরকী এই প্রথা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান। তিনি বলেন, একদিকে ধর্মহীনতার চর্চা এবং অন্যদিকে ইসলাম ও ইসলাম পন্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও কটূক্তি। জাতি হিসেবে মূলতঃ আমাদেরকে কোন দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা প্রত্যেকেরই গভীরভাবে ভাবা দরকার।
Discussion about this post