দুই ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা, একছেলে পুলিশ সদস্য, এক ছেলে ব্যবসায়ী, আরেক ছেলে ইজিবাইক চালান, আর একমাত্র মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। কিন্তু কেউই সত্তরোর্ধ্ব মায়ের ভরণপোষণ দিতেন না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করে কোনো রকমে জীবন চালাতেন মনোয়ারা বেগম। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে ঠিকমতো ভিক্ষাও করতে পারতেন না তিনি। অবশেষে সেই বৃদ্ধা মায়ের দায় দায়িত্ব নিলেন বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান।
টিপু সুলতানের উদ্যোগে মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সাংসদ টিপু সুলতানের নির্দেশে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার রায় মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে যান। তিনি অসুস্থ মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠান।
এর আগে, সোমবার সকালে একটি অনলাইন নিউজপোর্টালে মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। সংবাদটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকে ওই বৃদ্ধার জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করে তার সন্তানদের শাস্তি দাবি করেন।
বৃদ্ধা মায়ের প্রতি অবহেলার কারণে পুলিশে কর্মরত তিন ছেলে এবং শিক্ষিকা মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বরিশাল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেছেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার রায় জানান, মায়ের প্রতি অবহেলার কারণে মনোয়ারা বেগমের মেয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ভূতেরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মরিয়ম সুলতানাকে শোকজ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, স্বামী আইয়ুব আলী বেঁচে থাকা অবস্থায় ছয় সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন কেটেছে মনোয়ারার। কিন্তু ২০১৪ সালে আইয়ুব আলী সরদার মারা যান। সংসারে টানাটানি থাকলেও ছয় সন্তানকে কমবেশি শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। কিন্তু সেই গর্ভধারিণী মাকে দুইবেলা খাবারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। বয়সের ভার আর অসুস্থতার কারণে ভিক্ষা করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে মনোয়ারা বেগমের জন্য। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিক্ষা করতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভেঙে যায় তার। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাবুগঞ্জে স্টিল ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তের একটি ঝুপড়ি ঘরে বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে বেঁচে আছেন তিনি।
সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান জানান, সকালে বিষয়টি জানার পর তিনি খুবই কষ্ট পেয়েছেন। সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে অসুস্থ মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করা হয়। আর বৃদ্ধা মায়ের প্রতি অবহেলার কারণে পুলিশ কর্মকর্তা তিন ছেলে এবং শিক্ষিকা মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বরিশাল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও’র সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। অসুস্থ মনোয়ারা বেগমের চিকিৎসাসহ যাবতীয় ব্যয়ভার তিনিই বহন করবেন।
-একুশে টিভি
Discussion about this post