মাইনুরকে ভালোবাসার পাশাপাশি বিবাহের প্রস্তাব দেয় তারই আপন খালাত ভাই দেলোয়ার। কিন্তু মাইনুর তাতে রাজি হয়নি। প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় এক রাতে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে দেলোয়ার। সামাজিকভাবে উদ্যোগ নিয়েও ঘটনার মীমাংসা করতে পারেনি উভয় পরিবারের সদস্যরা। এরই মধ্যে অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ে মেয়েটি। এ ঘটনায় বাদি হয়ে মামলা করে মাইনুর। ওই মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয় দেলোয়ারের। পরে গ্রেফতার হয়ে সাজা ভোগ করে চার বছর। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও জামিন মেলেনি তার।
আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এক আদেশে মেয়েটিকে বিয়ে করলে জামিন পাবে শর্ত দেয়। কিন্তু কারাগারে বিয়ে পড়ানোর অনুমতি নেই এই মর্মে মাইনুরকে বিয়ে করা হয়নি তার। পরে ১৫ দিনের জামিন দেয় হাইকোর্ট। শর্ত একটি বিয়ে করতে হবে। জামিনে বেরিয়েই ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করে মাইনুরকে।
আজ বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চে বিয়ের নিকাহনামা দাখিল করা হয়। ওই নিকাহনামা গ্রহণ করে মাইনুরের মেয়ে মারিয়ার পিতার স্বীকৃতির সনদ এফিডেভিট আকারে দাখিলের জন্য দেলোয়ারকে নির্দেশ দেয় আদালত।
মামলার বিবরণীতে জানা গেছে, ধর্ষণের অভিযোগে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট মামলা দায়ের করেন ভোলা থানার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের মাইনুর বেগম। অভিযোগে বলা হয়, বিবাহের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাদিনীকে তার পিতার গৃহে রাতের বেলায় ধর্ষণ করে দেলোয়ার। পরে বাদিনী অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়েন। স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে তুলে নিতে বলা হলে টালবাহানা করে দেলোয়ার ও তার পরিবার। পরে এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল দেলোয়ারকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।
ওই রায়ে বলা হয়, ভিকটিম ও আসামি একে অপরের প্রতিবেশি। আসামি কর্তৃক যৌন সংগমের ফলে ভিকটিমের সাত মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। যদি আসামি ভিকটিমের সন্তানের পিতা না হত তাহলে মামলার বিচার চলাকালে সে আদৌও ওই সন্তানের পিতা কিনা তা পরীক্ষার জন্য ডিএনএ টেস্টের আবেদন করত। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই মামলার শুরু থেকেই আসামি দেলোয়ার পলাতক। ভিকটিমকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ অথবা প্রতারণার মাধ্যমে যৌন সম্মতি আদায় করে গর্ভে সন্তান দিয়েছে এবং তার অপকর্মের সাম্ভাব্য প্রতিফল থেকে বাঁচার জন্য পলাতক রয়েছে। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(১) ধারা অনুসারে আসামিকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হল। সাজা হওয়ার পর ২০১২ সালের ২৭ মে গ্রেফতার হন ওই আসামি। পরে কারাগার থেকে সাজার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামি দেলায়ার। তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী সাবিনা পারভীন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপিল করার পর হাইকোর্টে ৪/৫ বার জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত জামিন দেয়নি। আদালত বলেছে আসামিকে জামিন দেওয়া হলে এই শিশুটির পিতৃপরিচয় কি হবে? সমাজ কি তাকে ভালো চোখে দেখবে? পরে আদালত শিশু সন্তানের স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় আদেশ দেয়।
মাইনুর বেগম বলেন, ছেলের বাবা রাজি না থাকায় সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য আমাকে মামলা করতে হয়েছে। দেলোয়ার বলেন, আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে জামিন পেয়ে মাইনুরকে বিয়ে করেছি।
ইত্তেফাক
Discussion about this post