বিচারক নিয়োগ নীতিমালা তৈরি প্রশ্নে হাইকোর্টে অ্যামিকাস কিউরিদের (আদালতের বন্ধু) মতামত প্রদান শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ প্রথম দিনের মতো মতামত তুলে ধরেন।
শুনানিতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এএফএম হাসান আরিফ বলেছেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ রয়েছে। তবে দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করা হয়েছে কি না তা দেখার সাংবিধানিক দায়িত্ব বিচার বিভাগের।
হাসান আরিফ বলেন, এই দেশটি আমাদের সকলের। দেশটি কারো কাছ থেকে দান হিসেবে পাইনি। সশস্ত্র সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশটিকে অর্জন করে নিয়েছি।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা সংক্রান্ত রিট আবেদনের ওপর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত এই মামলার চূড়ান্ত শুনানিতে আদালতকে আইনগত মতামত দিয়ে সহায়তা করতে সাত অ্যামিকাসকিউরি নিয়োগ দেয় হাইকোর্ট। এরা হলেন, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও অ্যাডভোকেট এ এফ হাসান আরিফ। আদালতে রিটকারী পক্ষে ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, একজন অ্যামিকাসকিউরি আংশিক বক্তব্য রেখেছেন। আগামী ৫ জুন তিনি তার পরবর্তী বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আনয়নে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী ২০১০ সালের ৩০ মে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৬ জুন বিচারপতি মো. ইমান আলী (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দেয়।
রুলে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে ‘স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা আনতে কেন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা তৈরি করা হবে না এবং নিয়োগের নির্দেশনা প্রণয়ন করে তা কেন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে না,’ তা জানতে চাওয়া হয়।
আইন সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে নিয়োগের জন্য বিচারক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ইতোপূর্বে কী প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা জানাতে আইন সচিবকে বলা হয়।
পরে ২০১৪ সালে বিষয়টি বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় উঠেছিল। এ বিষয়ে মতামত দিতে আদালত তখন অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সাতজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করে।
সেই রুলের ওপরই চলতি বছর এপ্রিলে হাইকোর্টে এখন শুনানি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১২ মে চতুর্থ দিনের শুনানিতে আদালত অ্যামিকাস কিউরির মতামত উপস্থাপনের জন্য ১৮ ও ১৯ মে দিন ধার্য রাখে। সেদিন বিষয়টি অবগত না হওয়ায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে থাকা আইনজীবীদের অবগত করতে পুনরায় নোটিস দিতে বলেন আদালত। পরদিন এক অ্যামিকাস কিউরি সময়ের আবেদন জানালে আদালত ২৬ মে শুনানির জন্য রাখে। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।
Discussion about this post