আশফাকুর রহমান
একাদশ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় লিখিত পর্ব শেষ হয়েছে। এখন ফলের অপেক্ষা করছেন পরীক্ষার্থীরা। তাই, মৌখিক পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমান পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। মৌখিক পরীক্ষা নামক শেষ ধাপটা সাফল্যের সঙ্গে উত্তরে যেতে পারলে এরপরই বহুল আকাঙ্খিত ‘বিচারক’ হওয়ার সুযোগ। স্বপ্নের একেবারে কাছে এসে, মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতিটাও তাই পরিকল্পিত ও ভালো হওয়া চাই।
মৌখিক পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য আইন নিয়ে অনবদ্য দখল থাকা যেমন জরুরি তেমনি সুদৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসেরও প্রয়োজন আছে। লিখিত পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থী নিজের মেধার পরীক্ষা দিতে হয় শুধুমাত্র উত্তরপত্রে কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় নিজেকে উপস্থাপন করতে হয় পূর্ণাঙ্গভাবে সশরীরে। তাই মৌখিক পরীক্ষায় সতেজ, সপ্রতীভ ও আত্মবিশ্বাসী হওয়া চাই। মৌখিক পরীক্ষায় আপনাকে এক মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত রাখা হতে পারে। এজন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ইংরেজিতে প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা উত্তম হলেও বাংলায় প্রশ্ন করা হলে বাংলায় উত্তর করা বাঞ্ছনীয়। তেমনিভাবে ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হলে ইংরেজিতেই উত্তর দিন।
পরিষ্কার-পরিছন্ন, শালীন ও মার্জিত পোশাকে মৌখিক পরীক্ষার অন্তত ৪৫ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হোন। ছেলেদের জন্য কালো প্যান্ট, কালো স্যুট, কালো টাই এর সঙ্গে সাদা শার্ট আদর্শ পোশাক। আর মেয়েদেরও সাদা-কালো রঙের ভদ্রোচিত পোশাক পরিধান করা সমীচীন ।
যেসব বিষয়ে জোর দেবেন :
মৌখিক পরীক্ষায় সুনির্দিষ্ট সিলেবাস না থাকলেও আইনের ওপর বেশি জোর দিন। বাংলাদেশের আইনব্যবস্থা, তার পটভূমি ও প্রকৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখুন। আইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব ও নীতিমালাগুলো আবার ঝালিয়ে নিন। দেওয়ানী ও ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, সাক্ষ্য আইন, তামাদি আইন, সাংবিধানিক আইন, পারিবারিক আইন, ভূমি আইন ইত্যাদি আইনগুলো গুরুত্বের সর্বাগ্রে রাখুন। কেননা এসব আইন থেকে বরাবরই বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই এই বিষয়গুলোকে আলাদা গুরুত্ব দিন। উচ্চ আদালতের যুগান্তকারী রায়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক। মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার আগে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো আবার সমাধান করে রাখুন।
যারা সদ্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করে বিজেএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছেন তারা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ পঠিত কোর্সের নাম ও কোর্স কোডের নাম্বার দেখে নিবেন। আপনার পছন্দের আইনের ক্ষেত্রটি, যেখানে আপনি বেশি সাবলীল ও পারদর্শী সেক্ষেত্রটি সুযোগ পেলে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তুলে আনুন। মৌখিক পরীক্ষায় আইনজ্ঞ কিংবা অন্য যে কোনো জনগুরুত্বসম্পন্ন বহুল আলোচিত স্পর্শকাতর বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে উত্তর করুন। যাতে কোনো ব্যক্তি, সম্পদায়, জাতি বা ধর্মকে আবেগবশত আঘাত করা না হয়।
মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাস, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদানকারী অমর ব্যক্তিত্ব, স্বাধীনতাকেন্দ্রিক সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকা আবশ্যক। ধারণা রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সমসাময়িক বহির্বিশ্বের পরিস্থিতি সম্পর্কেও। আইন অঙ্গন কিংবা অন্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা বা বিষয়গুলো আয়ত্বে রাখুন। আর নিজ এলাকা তথা নিজ জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, ঐতিহাসিক স্থাপনা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। মৌখিক পরীক্ষায় অনেক সময় নিজের সম্পর্কে বলতে বলা হয়, তাই আপনার জন্মস্থান, একাডেমিক ও দক্ষতার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে নিজ সম্পর্কে ২-৩ মিনিটের একটি পরিচয়মূলক বক্তব্য আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখুন। কোনো প্রশ্নের উত্তর করতে না পারলে বা নেতিবাচক মন্তব্য এলেও বিচলিত হবেন না। মৌখিক পরীক্ষায় নিজেকে শান্ত রাখুন, টেম্পারমেন্ট ধরে রাখুন।
সৃষ্টিকর্তার কৃপায় পরিকল্পিত প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস, সাবলীল বাচনভঙ্গি, মেধা আর বিচক্ষণতা দিয়ে মৌখিক পরীক্ষার পরিবেশকে জয় করুন। শেষ ধাপটা সাফল্যের সঙ্গে পাড়ি দিয়ে পূরণ করুন আপনার স্বপ্নকে। সবার জন্য শুভ কামনা।
লেখক : নবম বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, সহকারী জজ, রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত
[কার্টেসি: যুগান্তর]
Discussion about this post