সাঈদ চৌধুরী:
আমার এমনিতেই খুব ভয় । বিভিন্ন ধরনের চক্রান্ত আমাদের দেশকে নিয়ে । এই সোনা ফলা বাংলাদেশের উপর নজর কার না ছিল ! ব্রিটিস থেকে শুরু করে এশিয়ার প্রত্যেকটি নগর বাংলাদেশকে নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে বাধ্য হয় । এর পেছনে কারনও রয়েছে অনেক । দেশের সামগ্রিক জনসংখ্যাই যদি কর্মের দিকে আকৃষ্ট থাকে তবে সে দেশ ঈর্ষার কারণ হতেই পারে । বাংলাদেশের মত এত কর্মঠ জাতি খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা তা সত্যিই সন্দেহের । উপমহাদেশে নেশার বিস্তারের ইতিহাস থেকে স্পষ্ট বাংলাদেশকে তারা নেশা বিস্তারের রুট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে । একসময় নেশায় ডুবিয়ে এই বাংলাদেশেীদের কাজ বিমুখ করার প্রক্রিয়ায় নেমেছে কিছু কিছু বাইরের দেশ । ইয়াবা নামক সর্বনাসা নেশার ফাদে পড়ে এমনিতেই তরুণ সমাজ আজ অনেকেই বখে যাওয়র পথে । সেখান থেকে ফেরানোর কৌশলে আমরা হেরে যাই প্রায় প্রায়ই । সর্বশেষ ঐশির ঘটনাটি আমাদের মনে এমনভাবে দাগ কেটেছিল যা এখনও হতাশার প্রতিচ্ছবি হয়ে রয়েছে ।
সাধারনত সমাজের এমন বখে যাওয়া ঘটনাগুলো নতুন করে মানুষকে ভাবতে শেখায় । একটু খেয়ার করলে দেখা যায় মেধাবী মুখগুলো হিংশ্র হলে তারা বেশী আকারে হিংশ্র হয়ে যায় । সামাজিক চিন্তা চেতনার ক্ষেত্রে যাদের সবচেয়ে ভালো অবদান থাকার কথা তারাই কোন কোন কারণে বেশী উগ্রতা দেখায় ।
নতুন আতঙ্কের নাম আসছে আবার । ব্লু হোয়েল । একটি গেম বিশেষ । আধুনিকতার উৎকর্ষতার সবচেয়ে বড় মাধ্যম ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই গেমস ভয়ানক হওয়ার কারণ হল এই গেমস আত্ন হত্যার প্রবনতা সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে । গেমসটির পঞ্চাশটি ধাপের মধ্যে সাতাশ তম ধাপে গিয়ে তিমির ছবি শরীরে ব্লেড দিয়ে অঙ্কন এবং সর্বশেষ ধাপে গিয়ে আত্ন হত্যার মত ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি করা এর ভয়ানকতম বৈশিষ্ট্য ।
রাশিয়ার মনোবিজ্ঞানী এই গেমসটি 2013 সালে আবিস্কার করার প্রায় দুবছর পর রাশিয়ায় প্রথম একটি আত্ন হত্যার ঘটনা ঘটে এবং তারপর আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যপী ।
সমীক্ষায় দেখা যায় রাশিয়ায় 2013 সালে গেমসটি আবিস্কারের পর 181 জন আত্নহত্যা করেছে এবং ভারতেও এই সংখ্যা 160 এর উপরে । ভয়ানক তথ্য হল বাংলাদেশে এই গেমসের কড়াল গ্রাসের শিকার হয়ে ইতিমধ্যে আত্নহত্যা করেছে 60 জনের মত (সূত্রঃ ইত্তেফাক 09.10.2017)।
সাধারণত হতাশ তরুনেরা আকৃষ্ট হচ্ছে এই গেমসের প্রতি । বিভিন্ন জুয়ারীরা যদি তাদের ব্যবসার পূণ্যভূমি খুঁজতে যায় তবে বাংলাদেশকে খুঁজে নেবে এই কারণে যে এখানে আবেগপ্রবন মানুষ বেশী এবং আমাদের শিশুরা আরও বেশী আবেগ প্রবন । অল্পতেই হতাশা এবং সে হতাশা থেকে আত্নহত্যার ঘটনা এমনিতেই এ রাজ্যে অনেক ।
সেন্ট্রাল রোডের অপূর্ব বর্ধন স্বর্ণা ছিল তুখোর মেধাবী একজন ছাত্রী । গতকাল আত্নহত্যার পর জানা গেল সে এই গেমসে আসক্ত ছিলো খুব বেশী । পড়াশোনার কথা বলে এনড্রয়েড ফোন নিয়ে ইন্টারনেটে যাত্রা শুরু এই মেয়েটির কিন্তু শেষটা হল আত্নহত্যা দিয়ে । আমরা হারালাম একটি মেধা ।
যখন আমাদের সন্তানেরা ইন্টারনেট দিয়ে বিশ্ব জয় করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনই আরেকটি বড় ধাক্কা দেওয়ার জন্য পায়তারা শুরু করেছে শত্রু মহল । যদি সন্তানের সঠিক বিকাশকে আমরা সঠিকভাবে পথ চেনাতে না পারি তবে কি কি সমস্যা হতে পারে তা কিন্তু বার বারই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমাদের কাছে ।
যে দেশের মনাবিজ্ঞানী এই গেমসটি আবিস্কার করে আত্নহত্যার দিকে ঝুকে দিচ্ছে মানুষদের সে যেমন অপরাধী তেমনি যারা বিশ্বব্যপী ছড়িয়ে দিচ্ছে তারাও সমান অপরাধী । এই অপরাধ শুধুমাত্র মেধা সম্পন্ন দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেশের মেধা নষ্ট করার পায়তারা নয়তো ! এই প্রশ্ন কিন্তু এখন এসেই যাচ্ছে ।
আমাদের সন্তানদের সময় দেওয়া নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে । যারা সচেতনভাবে কথাগুলো এড়িয়ে যান তারা কখনই সন্তানদের মঙ্গল চাননি । শুধু শুনে গেলাম কিন্তু কাজের বেলায় আগের মতই আচরণ হলে আমরা মুখ থুব্রে পড়তে বাধ্য ।
মা এবং বাবা উভয়কেই সন্তানকে সময় দিতে হবে । প্রাইভেট টিউটর, কোচিং-এ সন্তানকে দিয়ে রেখেছি আর ভেবে নিচ্ছি সন্তান জজ ব্যারিস্টার হয়ে বের হবে এই ভাবনাটা বড় বেশী বেমানান বলে মনে করি । কত আচার আচরণ শেখা থেকে এখনকার ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত একবার ভেবে দেখেছেন ? তারা কি পেশাদার হওয়ার আগে ভালো মানুষ হওয়ার কথা ভাবতে শিখছে ?
আসুন সন্তানকে সময় দেই । এনড্রয়েট ফোন হাতে তুলে দেওয়া থেকে বিরত থাকি । যারা ইচ্ছে করে আমাদের মেধাগুলোকে নষ্ট করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তাদের পরিকল্পনা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য আমাদের বড় বেশী প্রয়োজন নিজেদের সন্তানের দিকে সঠিক দায়িত্ব পালন করা । সরকারের নিকট আকুল আবেদন করছি আঠারো বছরের আগে শিশুদের এনড্রয়েড ফোন অবাধে চালনার ব্যপারে আইন করে নিষিদ্ধ করার । বাবা মা সাথে আছে শিশুর হাতে এনড্রয়েপ থাকতে পারে কিন্তু ক্লাস থ্রি, ফোর বা এইট নাইনের বাচ্চারাই এনড্রয়েড নিয়ে ঘুরে বেড়াবে রাস্তায় এটা সমীচিন নয় ।
অনতিবিলম্বে এই গেমসের লিংকগুলো সরানোর জন্য তথ্য মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি । আসুন আমাদের মেধা নষ্ট করার বহিঃবিশ্বের চক্রান্ত রুখে দিতে আমরা এক্ষনি সচেতন হই ।
Discussion about this post