রোহিঙ্গা সংকট দিন দিনই যেন আমাদের জন্য ভয়াবহ উঠছে । বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ধাক্কা সামলিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার স্বাক্ষী হয়েছে দুনিয়া জোড়া । এই কর্মকান্ড বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে অনেক বেশী সহায়তা করবে এতে কোন সন্দেহ নেই এবং এও সন্দেহ নেই যে আমরা মনের দিক থেকে অন্যান্য অনেক দেশের চেয়েও উদার !
যেখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা হল আমাদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি । তথ্যমতে জানা যায় মিয়ানমারে এইআইভি নিয়ে বসবাস করা মানুষ বাংলাদেশের চেয়ে 19 গুণ বেশী । ইতমধ্যেই বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে 55 জনের শরীরে এইচ আইভি পজেটিভ পাওয়া গিয়েছে এবং ধারনা করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা এইআইভিতে আক্রান্ত রয়েছে যারা বর্তমানে আমাদের দেশেই অবস্থান করছে ! আগে চলে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে দশজন সনাক্ত করা হয়েছিল এবং এ নিয়ে এখন বর্তমানে এইচআইভি সনাক্ত কৃত রোহিঙ্গার সংখ্যা 65 !(সূত্রঃ প্রথম আলো 02.11.2017 ইং)
দশ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা যদি এইচআইভি আক্রান্ত হয় তবে কতটা উদ্বেগজনক হতে পারে আমাদের জন্য ভাবতে পারেন ?
শোনা যাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গাই পতিতা বৃত্তির সাথে জড়িয়ে পড়ছে । এছাড়াও কিছুদিন আগে শোনা যাচ্ছিল বাংলাদেশীরা রোহিঙ্গাদের বিয়ে করার ব্যপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে এমন খবর । কক্সবাজারে উখিয়াতে অবস্থারত রোহিঙ্গা যারা রয়েছে তারা সংখ্যার দিক থেকে অনেক এবং তা প্রায় আট লাখেরও কাছাকাছি তথ্য মতে পাওয়া যায় । এত বৃহৎ জনগোষ্ঠি খেয়াল রাখা আমাদের দেশের জন্য কঠিন হলেও প্রশাসন এতদিন খুব দক্ষতার সাথে তা করে এসেছে । গত কিছুদিন আগে রোহিঙ্গাদের হাতে কয়েকজন বাংলাদেশী প্রহৃত হয় এবং ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে ইতমধ্যেই কয়েকটি ।
একদিকে শিশুদের মায়াভরা মুখ আর অন্যদিকে এই হতাশাজনক চিন্তাগুলো আমাদের বার বার হতভম্ব করে দিচ্ছে । সরকার দ্রুত অনেক ব্যবস্থা নিলেও অন্যদেশের নাগরিককে একটি দেশে থাকবার মত জায়গা তৈরী করে দেবার পর সমস্ত সেবা দেওয়া যথেষ্ঠ কঠিন । কিন্তু সবচেয়ে বিব্রতকর ও হতাশার কথা হল রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা এবং নিরাপত্তf বিঘ্নিত হওয়া ।আরও বেশী আকারে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়লে জঙ্গি তৎপরতা নিয়েও বড় ধরনের শঙ্কা তৈরী হওয়ার বিষয় উড়িয়ে দেওয়া যায় না ।
রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যপারে সব দেশ বললেও এখনও মিয়ানমার চুপচাপই রয়েছে । কোন ধরনের নির্দিষ্ট উদ্যোগের ব্যপারে তারা এখনও নিশ্চুপ থাকায় বিষয়টি আমাদের জন্য আরও বেশী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বার বার ।
রোহিঙ্গা কর্তৃক কোন বড় ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকলেও এইচআইভির ব্যপারে আরও আন্তরিক হতে হবে সরকারকে । এইচআইভি শনাক্তকৃত রোহিঙ্গাদের আলাদা সরিয়ে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন । একসাথে এরা থাকলে সংক্রমন আরও বেড়ে গিয়ে আমাদের জন্য বড় হুমকির কারণ হতে পারে । সার্বিক নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে ব্যপারে আরও কঠোর দৃষ্টি দিতে হবে ।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীরা জাতিসংঘের শান্তি মিশনে যথেষ্ঠ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ।সে হিসেবে শান্তিরক্ষী মিশন পরিচালনা করে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানোর কোন পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের কাছে ।
খুব দ্রুত রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে । এর কোন বিকল্প নেই ।পার্শবর্তী দেশগুলোর ত্রাণ কার্যক্রম বাড়ানোর পাশাপাশি মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর করতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন স্বার্খের জন্য ।চেকপোষ্টে নিরাপত্তা আরও জোড়াদার করতে হবে । প্রয়োজেন প্রতিটি চেকপোষ্টে এজন করে এইআইভি বিষয়ক সেবা দানকারী ডাক্তার নিয়মিত পর্যবেক্ষনের জন্য রাখতে হবে ।
আমরা চাই রোহিঙ্গা সমস্যার সহজ ও দ্রুতগতির সমাধান প্রক্রিয়া । বিশ্বের চাপ মিয়ানমারের উপর আরও জোড়ারো ভাবে বাড়াতে হবে । এইচআইভি ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার বিষয়টি আরও নজর দারিতে আনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও সরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে নিবেদন রাখছি ।
লেখকঃ সাঈদ চৌধুরী,সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
Discussion about this post