বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র উপর আরোপিত ৭.৫০% ভ্যাট প্রত্যাহারের আন্দোলন করতে গিয়ে দেখলাম অনেকেই একটি ভুল তথ্য দিচ্ছেন সঠিকভাবে না জেনে। আর তা হল “শিক্ষা মৌলিক অধিকারের একটি”। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা পত্রের (১৯৪৮) অনুচ্ছেদ ২৬ মতে শিক্ষা মৌলিক অধিকার বলা হলেও বাংলাদেশ সংবিধানে এটা মৌলিক অধিকার নয়। যদিও শিক্ষা জাতির উন্নতির প্রধান
সোপান তথা জাতির মেরুদণ্ড। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময়ের পরও আমাদের সংবিধানে শিক্ষা মৌলিক অধিকার
হিসেবে স্বীকৃত হয়নি। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শিক্ষাকে মৌলিক নীতিমালা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে (অনুচ্ছেদ ১৫ ও ১৭)। যা সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দিকনির্দেশনা দেয়। বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে আঠারোটি মৌলিক অধিকার সুস্পষ্টভাবে কথা বলা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ২৭-৪৪ পর্যন্ত) । যার কোথাও শিক্ষা র কথা বলা হয় নি। উল্লেখ্য, পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সংবিধানে শিক্ষা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১(ক), নেপালের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭ এবং মালদ্বীপের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬ এ শিক্ষা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
মৌলিক অধিকারগুলো হল একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন। যখন কতিপয় মানবাধিকার কে কোন দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ব করে সাংবিধানিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় তখন তাদেরকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। আর মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ অর্থাৎ হেফাজত করার দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের, যা সংবিধানে ৪৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে এবং এই মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ১০২ (১) বিধান মোতাবেক সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মামলা করতে পারবে। শুধু তা নয়, অনুচ্ছেদ ২৬(১) এ বলা হয়েছে, মৌলিক অধিকারেরর সাথে অসামঞ্জস্য সকল আইন বাতিল বলে গণ্য হবে। মৌলিক অধিকারগুলোকে পরিবর্তন করলে স্বয়ং সংবিধান কেই পরিবর্তন করতে হয়। বাংলাদেশ সংবিধানে শিক্ষা মৌলিক অধিকার না হওয়ার কারণে মৌলিক নীতিমালা লংঘনের দায়ে রাষ্ট্র বা সরকারকে আইনত বাধ্য করা যায় না বা তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। অন্যদিকে, মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি না থাকায় শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অপরিসীম কৃপণতা। সর্বশেষ ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতির ভঙ্গুর মেরুদণ্ডে ঠিক করার জন্য যেখানে শিক্ষাখাতে সরকারী বরাদ্দ বাড়ানো উচিত সেখানে এই ধরনের সিদ্বান্ত জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়ার শামিল। শিক্ষাকে শিগগিরই মৌলিক চাহিদার পরিবর্তে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি প্রদানে সরকারের মধ্যে উপলব্ধিবোধ জাগ্রত করার জন্য ছাত্রসমাজ, সুশীলসমাজ, রাজনীতিক শিক্ষক সমাজের ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।
এম.আর.ওয়াজেদ চৌধুরী (রায়হান)
মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষার্থী
আইন বিভাগ,আইআইইউসি
Discussion about this post