সাঈদ চৌধুরীঃ
শিক্ষক ক্লাসে ঘুমোচ্ছেন । মাথা টেবিলে দিয়ে । প্রথম একদিন এই ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে আসার পর খুব ঝড়ো হাওয়া বইয়ে গেল সমালোচনার । হ্যা ! এত বড় সাহস শিক্ষক ক্লাসে ঘুমোলে আমাদের সন্তানেরা শিখবে কি, আমরা কি জাতি পাবো, কি হবে এদের দিয়ে এরকম নানা কথা ।
একদিন পরই সব মত পরিবর্তন হয়ে গেল । দেখলাম সবাই দয়ার সাগরে ভাসছে । শিক্ষক অসুস্থ্য হতে পারে, তিনি একজন মা, তিনি ঘুমোতে পারেনই এইসব নানা কথা ।
অবাককর বিষয় দুটো বিষয়েই মন্তব্যের কোন অভাব নেই । দেখা যাচ্ছে মন্তব্য দিয়ে দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে কিছু কিছু মানুষ । গালাগালি করছেন কেউ কেউ ।
আচ্ছা এগুলোর মানে কি বলুন তো ? সব কিছুর নিয়ম, কানুন এবং ধারা রয়েছে । তারপরও যে যার মত বক্তব্য উপস্থাপন করলেতো সঠিকতার মানই থাকবেনা এক সময় ।
আমি ধরে নিলাম সেদিন সেই শিক্ষিকা অসুস্থ্য ছিলেন । এখন প্রশ্ন কেন তবে ক্লাস রুমে গেলেন ? তবে কি ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাকে জোড় করে ক্লাস রুমে পাঠিয়েছেন ? যদি তাই পাঠিয়ে থাকেন তবে প্রশাসনিক দুর্বলতা বলা যায় এটাকে ।
আমার যতদূর মনে পড়ে আমার প্রাইমারী স্কুলের একজন শিক্ষক এমন ঘুম কাতুরে ছিলেন । তিনি খুব রাগী ছিলেন । অংক করতে বলে চেয়ারে ঘাড় এলিয়ে দিয়ে ছোট করে চেয়ে দেখতেন কে কে দেখাদেখি করে । আমরা একে একে অংক করে তার কাছে নিয়ে যেতাম এবং তিনি দেখতেন । তাঁকে কখনও ফাঁকি দিতে দেখিনি এবং তিনি বলতেন আমার খুব ঘুম পায় তবুও আমি তোদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি কারণ ক্লাসে তোদের দেখাশোনা করি বলেই আমাকে সরকার টাকা দেয় । আমি যতটুকু সময় চোখ বন্ধ করবো ঐটুকু সময়ের টাকা হালাল হবে না । অনেক সময় অংক করাতে করাতে শেষের ক্লাসে তিনি দেড় ঘন্টাও নিয়েছেন ক্লাস !আমরাও সেখান থেকেই শিখেছি । ডিউটির সময় অনেক ঘুম পেলেও আবার তাকিয়ে উঠি স্যারের কথা মনে করেই !
আরেকটি ঘটনা দেখলাম আমার মেয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত বছর । মেয়ে এসে অভিযোগ দিল শিক্ষকরা তাদের ক্লাসে থাকেন না বেশিরভাগ সময় এবং এ সময় তার শিক্ষকরা নাকি ক্লাসের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে রাখে যাতে কোন ছাত্র-ছাত্রী বারান্দায় এসে কোলাহল না করে । ভিজিটে কেউ এলে দ্রুত সবাই ক্লাসে গিয়ে দেখাতো ক্লাস ঠিকই চলছে ।
এখন এই শিক্ষক কেন ঘুমোচ্ছিলেন তা আমাদের ভাবনায় আসার আগেই অনেক নেগেটিভ চিন্তা আসার কারণ একটাই মানুষের প্রতি বিশ্বাস উঠে যাওয়া । প্রাইমারির শিক্ষা সত্যিই খুব নাজুক অবস্থায় আছে অনেক ক্ষেত্রেই ।এই অনিয়মগুলো সামনে আনা সব সম্ভব নয় কিন্তু দুর্নীতি করে নিয়োগ দেওয়ার ফলে ঝিমানো শিক্ষকের সংখ্যাও কম নয় যারা ইচ্ছে করেই পড়ায় না ক্লাসে !
পক্ষে বিপক্ষে যারা যাই বলছেন তাদের কাছে একটাই মিনতি যে বিষয়ে অভিযোগটি উঠেছে সেটা প্রথম কথা হল তিনি ক্লাসে ঘুমোচ্ছিলেন এবং ছাত্র-ছাত্রীরা এলোমেলো অবস্থায় ছিল । উনি না হয় অসুস্থ্য ছিলেন ধরে নিলাম যারা সুস্থ্য থেকে কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে গান শোনে এবং ক্লাস টাইমে বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে রাখে ক্লাসের তাদের কি বলবেন ?
নীতির জায়গায় আসলে ওনাকে না হয় বাঁচানো গেল কিন্তু যে গরিব বাবা মায়েরা এসে প্রাথমিকের শিক্ষকের কাছে আবেদন করে আমার সন্তানকে আপনার কাছে সমর্পণ করে গেলাম আপনি দেখবেন এবং পর মুহূর্তে ঐ গার্ডিয়ানের সন্তানকে পেছনের বেঞ্চের ছাত্র বলে, প্রাইভেট পড়ে না বলে কোন কেয়ারই নেওয়া হয় না এই নীতি বর্হিভূত কাজের দায় এড়াবেন কি করে !
অনিয়ম বন্ধে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন । শিক্ষকতা জাতির বিবেককে দাঁড় করিয়ে দেয় । যেখানে বিবেকের প্রশ্ন সেখানে ঘুম কাতুরে ছবি সত্যিই হতাশার । যদি প্রধান শিক্ষক অসুস্থ্য হওয়ার পরও ক্লাসে ঢুকতে বাধ্য করেন সেক্ষেত্রেই শুধু এ দোষকে ছাড় দেওয়া যায় কিছুটা নতুবা অনিয়ম বলেই বিবেচিত হবে এই চিত্রটি ।
Discussion about this post