সাঈদ চৌধুরী:
সভ্যতার নাম যদি হয় চেপে রাখা তবে সে সভ্যতার প্রয়োজন কি ছিল ? বার বছর বয়সী ছেলে অথবা মেয়ের মনোদৈহিক পরিবর্তনের সাথী যদি আপনি না হতে পারেন তবে আপনার সন্তান বখে যেতে পারে ! এই বয়সটাতে পরিবর্তন কেবল শুরু হয় মাত্র । কৈশরে পা দিতে গিয়ে শিশুরা চরম ভাবে আপ্লুত হয় বিভিন্ন কারণে । তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে চায় কিন্তু পারেনা এবং দোলাচলের কারণে অনেক শিশুই এই সময়টাতে ঘরকুণো হয়ে পড়ে । তখন শিশুদের উপর বিশেষ খেয়াল রাখা প্রতিটি বাবা মায়েরই দায়িত্ব ।
মেয়েদের ক্ষেত্রে এ খেয়াল রাখা যেন আরও বেশী গুরুত্বের । আমাদের সামজ ও পারিপার্শিক অবস্থা এখনও কন্যা শিশুর নিরাপত্তা দিতে পারেনি । সভ্যতার নাম করে আমরা বর্তমানে যেখানে এখন বিচরণ করি সেখানে উস্কে দেওয়ার মত উপকরণ যেন অভাব নেই । নেশার বিস্তারন, অশ্লীল কার্যালাপ, ভিনদেশী সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধের জায়গায় মানুষের অনীহা সবকিছু মিলিয়ে সভ্যতার রাস্তায় গমনে আমাদের যে অস্থিরতা তা কিন্তু স্পষ্ট করে তুলছি আমরাই ।
শ্রীপুর বিভিন্ন কারণেই সংবাদের দিক থেকে সামনে চলে আসছে বার বার । শ্রীপুরের পুরোটা জুড়েই বর্তমানে শিল্পায়নের বড় একটি ধাপ অতিক্রম হচ্ছে । বাইরের প্রচুর মানুষ এখানে আসছে প্রতিনিয়ত । যখন শিল্পায়নের মধ্যবর্তী অবস্থা সৃষ্টি হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই আইন শৃঙ্ক্ষলার উপর প্রভাব বেশী পড়ে । কিন্তু বর্বরতা বাড়তে থাকা মানে হল সামাজিক ও পারিপার্শিকভাবে অপরাধের প্রবনতা বাড়তে থাকা ।
একটি ছোট্ট মেয়ে যে পুতুল খেলার বয়সে তার আকুতি থাকে শুধুই একটি পুতুলের ঘর সেখানে যদি সে অন্তস্বত্তা হয় তবে সে কিভাবে তার সারাজীবন কাটাবে তা কি বরবর মানুষগুলো একবারও ভাবে ? শ্রীপুরেই এমন একটি ঘটনা ঘটেছে কিছুদিন আগে । বার বছরের মেয়ে ধর্ষিতা হয়ে সে এখন পাঁচ মাসের অন্তস্বত্তা !মেয়েটির বাড়ি শ্রীপুরে তেলিহাটী ইউনিয়নের সাইটেলিয়া এলাকায় ।সে মেয়েটি বাড়ির পাশেই মাদ্রাসায় যাচ্ছিল । অনেকদিন থেকেই নাকি উত্যক্ত করে আসছিল নুরুল ইসলামের ছেলে আমানউল্লাহ ।একদিন তাকে ধরেই ফেলে এবং নিয়ে যায় জঙ্গলে । ধর্ষিতা হয় মেয়েটি !
বার বছরের মেয়েদের দিকে তাকালে টিজ করতে ইচ্ছে হয় এমন মানুষ সমাজে জন্ম নেয় আসলে কাদের ঔরসে । এই মানুষ শারীরিক আকৃতির বস্তুগলোও আমাদের সমাজের অংশ বলে আমাদের মানতে হয় ।যাদের চোখে শিশু নিরাপদ নয় তারা অপরাধী এবং তারা মানবাধিকার চাওয়ার যোগ্যতাও হারায় বলে আমি মনে করি । আইন যখন দ্রুত এদের বিচার করবে কোন মানিবাধিকারের প্রশ্ন এদের স্বপক্ষে আসতে পারেনা !
মেয়েটিকে দেখে বুক ফাটা আর্তনাদ গ্রাস করবে এ শহরের মানুষের । কিন্তু মানুষগুলো ভুলে যায় আসলে ইচ্ছে করেই হয়ত ভুলে যেতে চায় কারণ তারা মনে করে ভুলে গেলেই বুঝি আমরা বেঁচে যাচ্ছি ! আসলেই কি তাই ? তনু হত্যার পর যখন রাস্তায় দাঁড়ালাম তখন তনু হত্যার বিচার হয়ে গেলে কি অপরাধীরা একটু হলেও ভয় বেশী পেতোনা অপরাধ করার ক্ষেত্রে ? তনুকে ভুলে যাওয়ার পর একে একে রিসা গেল, বাসে ধর্ষিতা হয়ে অকালে চলে গেল এক জীবন সংগ্রামী তরুণী আর না জানা কত নারী যে প্রতিনিয়ত অসহায়ত্ব বোধ নিয়ে চলছে তার কোন হিসেব নেই যেন !
সভ্য যুগের গমনে আমাদের বর্বরতার এই নতুন স্বাক্ষীগুলো মানুষ হিসেবে আমাদের কোন জায়গায় নিয়ে দাঁড় করবে বলতে পারেন ?ছোট্ট মেয়েটি যার নিজের স্বত্তা জুড়েই এখন শিশু সুলভ আচরণ সেখানে সে অন্তস্বত্তা !গাজীপুর জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়েছে বলে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি অনেক বেশী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় সহ সকলকে কিন্তু আরেকটা ব্যপারে প্রশাসনকে মনোযোগী হতে অনুরোধ করছি তা হল অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার ।
এই সব প্রমাণিত অপরাধী মানবাধিকারের আওতায় এসে এদের পক্ষে উকিল দাঁড়াবে তা একজন সভ্য দেশের সভ্য নাগরিক দাবী করা আমাদের মত এই মানুষগুলো চায় না । সঠিক বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসনের সহায়তার পাশাপাশি প্রত্যেকটি মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে । চেপে রাখার অভ্যাস তৈরী করে যেন এই স্বাধীন দেশে কোন কন্যা শিশুকে না বাঁচতে হয় সে ব্যপারে এক্ষনি পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এটাই হতে হবে সবচেয়ে বড় সামাজিক আন্দোলন । নইলে সভ্য নামক বিশেষনটি মানবের আগে ব্যবহারের যোগ্যতা আমরা হারাবো এক সময়!
Discussion about this post