মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার (২২ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের রাউজানে সাকা চৌধুরীকে এবং ফরিদপুর শহরে মুজাহিদকে দাফন করা হয়।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মানবতাবিরোধী এই দুই অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সাকা চৌধুরী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। মুজাহিদ ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
ফাঁসি কার্যকরের পর বাদবাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ২টা ৪৯ মিনিটে দুজনের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কারাগার থেকে তাঁদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়।
সাকা চৌধুরী
রাউজানের গহিরায় পৈতৃক বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সকাল ১০টার দিকে সাকা চৌধুরীকে দাফন করা হয়। এ সময় তাঁর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বাড়ির মসজিদ প্রাঙ্গণে সাকা চৌধুরীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পড়ান হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। এতে সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্য ছাড়াও স্থানীয় লোকজন অংশ নেন।
কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল নয়টার দিকে তাঁর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছায়।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাকা চৌধুরীর জানাজা ও দাফনকে কেন্দ্র করে রাউজানে বাড়তি নিরাপত্তা-ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ৩৩ মাসের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ২৯ জুলাই ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সেই ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপর ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন সাকা চৌধুরী। তবে ১৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার ওই আবেদন খারিজ করে দেন।
সাকা চৌধুরী (৬৭) মুসলিম লীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেন। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। স্বৈরশাসক এরশাদের সামরিক শাসনামলে তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
মুজাহিদ
ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে আদর্শ একাডেমি পরিচালিত আইডিয়াল মাদ্রাসার মূল ফটকের কাছে সকাল সোয়া সাতটার দিকে মুজাহিদকে দাফন করা হয়। এর আগে ওই মাদ্রাসা মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পরিবারের সদস্য ও দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
কড়া নিরাপত্তা-ব্যবস্থায় মুজাহিদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ফরিদপুরে পৌঁছায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজবাড়ী-ফরিদপুরের সীমান্ত এলাকা সাইনবোর্ড নামক স্থানে তাঁর লাশ গ্রহণ করেন। এরপর তাঁর লাশ আইডিয়াল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মুজাহিদের জানাজা ও দাফনকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। সব আনুষ্ঠানিকতা নির্বিঘ্নে শেষ হলেও নিরাপত্তা-ব্যবস্থা বহাল আছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগ মুহূর্তে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা হাতে নিয়ে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা ও গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায়ে সেই আলবদর বাহিনীর অন্যতম নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছরের ১৬ জুন সেই ফাঁসির সাজা বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন মুজাহিদ। ১৮ নভেম্বর ওই আবেদনও খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ (৬৮) বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন।
Discussion about this post