শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সিঙ্গাপুরে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার পর সে দেশের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল তারা দু’জন। সেখানে দেড় বছর কারাভোগের পর তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশে ফিরে আবারও জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাকালে ওই দুই ‘জঙ্গি’কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতার হওয়া দুই যুবকের নাম দৌলত জামান ওরফে মোয়াজ আল বাঙালি (৩৫) ও সোহেল হাওলাদার ওরফে বেলাল হাফসী আল বাঙালি (২৭)। তাদের কাছ থেকে দু’টি পাসপোর্ট, ৯টি উগ্রবাদী বই, ৪টি মোবাইল ফোন এবং ৭টি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, ‘দৌলত ২০০৪ সালে এবং সোহেল ২০০৯ সালে শ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুর গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে তারা মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। প্রবাসে থাকা অবস্থায় তারা সংগঠিত হয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিচারক, নাস্তিক ও পীরগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বছর দেড়েক আগে সিঙ্গাপুর পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। দেড় বছর জেলে থাকার পর মুক্তি পেয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর তারা দেশে ফিরে আসে। এরপর থেকেই তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। তারা দেশে ফিরেও জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর জন্য সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল।’
র্যাব সূত্র জানায়, ২০১৫ সাল থেকে সিঙ্গাপুর প্রবাসী মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি সেদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে গোপনে দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছিল। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় অর্ধ শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু মিজানুর রহমানসহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ড শেষ হওয়ার পর দৌলত ও সোহেলকে দেশে ফেরত পাঠায় তারা।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তারা জানান, সিঙ্গাপুরে তারা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। ২০১৬ সালে মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে প্রবাসী ৮জন সদস্য গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা বাংলাদেশে ফিরে জঙ্গিবাদ কার্যক্রম শুরু করবে। এসময় স্বঘোষিত জঙ্গি নেতা মিজানুর রহমান দৌলতকে বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রমের পরিকল্পনা কাউন্সিলর হিসেবে এবং সোহেলকে মুহাজির বা যোদ্ধা হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে গত বছরের এপ্রিল মাসে সিঙ্গাপুর পুলিশ প্রথমে মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে দৌলত, সোহেলসহ তাদের আরও ৬ সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। মিজানুরসহ অন্যরা এখনও সিঙ্গাপুরের জেলে রয়েছে।
জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া দৌলত জামানের বাবার নাম মৃত সোলায়মান আলী। গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার গাবতলী থানার বালিয়া দিঘীর মালিয়ানডাঙ্গায়। এছাড়া সোহেলের বাবার নাম ইসমাইল হোসেন হাওলাদার। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ থানার বাগদী এলাকায়।
Discussion about this post