ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার (৫৪ ধারা) ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারা (১৬৭ ধারা) প্রয়োগ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য সম্পর্কিত কিছু নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। এ দুই ধারা নিয়ে হাই কোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব নির্দেশনা এসেছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য
১. উঁচু মানের পেশাগত দায়িত্বশীলতা দিয়ে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা মানুষকে সুরক্ষা ও কমিউনিটিকে সেবা দেবে; নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব তারা পালন করবে আইন মেনে।
২. দায়িত্ব পালনকালে তারা মানুষের মর্যাদা রক্ষা ও সম্মান করবেন এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখবে।
৩. অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কেবল দায়িত্ব পালনে আবশ্যক হলেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করবে।
৪. আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কেউ নিষ্ঠুর-অমানবিক-মর্যাদাহানিকর কোনো আচরণ, নির্যাতন বা শাস্তি প্রদান অথবা তাতে উসকানি দেওয়ার ঘটনা সহ্য করবে না।
৫. সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকারের প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেবল সম্মানই দেখাবে না, তা মেনেও চলবে।
৬. মানুষের জীবন যেহেতু সবচেয়ে মূলবান সম্পদ, সেহেতু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।
৭. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাথমিক চেষ্টা থাকবে অপরাধের পথ বন্ধ করার দিকে। একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর সক্রিয় হওয়ার চেয়ে আগেই তা প্রতিহত করা উত্তম।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করার পর ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ-কার্যালয়ে তার মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনার পর বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে।
সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করে। তার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাই কোর্ট এ বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়।
রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয় সরকারকে।
রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে ২০০৪ সালে তা মঞ্জুর হয়। তবে হাই কোর্টের নির্দেশনা সে সময় স্থগিত করা হয়নি।
এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছর ২২ মার্চ আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। ২৪ মে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে রায় দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
Discussion about this post