গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি ঘোষিত বহুল আলোচিত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে না দেয়ার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বিএনপি । এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় ১১ জন নিহত হয়েছেন এবং দেড় শতাধিক গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।বিএনপি চেয়াপারসন নিজেও হয়েছেন অবরুদ্ধ। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বা বিএনপি যদি অবরোধ প্রত্যাহার না করে, তাহলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা ছাড়া সরকারের হাতে অন্য কোনো অপশন থাকবে না। এমনটিই জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা।
রবিবার বিশেষ এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এমন ইঙ্গিত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে একটি অনলাইন মিডিয়া সহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কবে-কখন এমন দিনক্ষণ ঠিক না করা হলেও তাকে গ্রেফতার করার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা। তারা বলছেন, অবরোধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারাদেশে ঘটে যাওয়া নাশকতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বড় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আভাস পাওয়া গেছে।
কবে নাগাদ এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে- জানতে চাইলে সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, আরও কিছু সময় দেওয়া হবে বিএনপিকে। অবরোধ কর্মসূচি কতটা দীর্ঘায়িত হয় সেটা পর্যবেক্ষণ করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কা সরকারের মাঝে নেই। তবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে সরকার কত কঠোর হবে, সেই বিষয়টি বিএনপির ওপরই নির্ভর করছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সরকারের ও দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে খালেদাকে জেলে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্তের কথা আলোচনা হয়েছে। দুইজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও তিনজন নেতা বৈঠকে নেওয়া এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ওই সব নেতাদের কাছ থেকে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে- বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, উনি (বেগম জিয়া) ভালো থাকতে চাচ্ছেন না। সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য করছেন—তবে তাই হবে। উনাকে (বেগম জিয়া) দুই কম্বলেই থাকতে হবে (সাধারণত জেলখানায় কয়েদিকে দুটি কম্বল সরবরাহ করা হয়ে থাকে)।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, অবরোধের নামে বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে যে নাশকতার ঘটনা ঘটছে এগুলো বন্ধ করতে সরকারকে যত কঠোর হওয়া লাগে, ততই কঠোর হবে।
‘প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে’- সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এমন হুমকির বিষয়ে তার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) তো আটকেই রাখা হয়েছে। তিনি কার্যত বন্দী। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। তিনি কার্যালয় থেকে বের হতে পারেন না। তাকে বের হতে দেওয়া হয় না। কাউকে সেখানে যেতেও দেওয়া হয় না।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জঙ্গিবাজি, বোমাবাজি, সহিংস কর্মকাণ্ডের উসকানিদাতা হিসেবে খালেদা জিয়া খুনের মামলার আসামি হতে পারেন এবং তাকে গ্রেফতারও করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারির ইস্যুকে কেন্দ্র করে গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
Discussion about this post