বর্তমানে দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের বড় একটা অংশ দখল করে আছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। শিক্ষিত বেকারেরা সমাজে সবচেয়ে বেশি সামাজিক অবহেলিত। পিতা-মাতা তথা অবিভাবকরা চায় তাদের সন্তান লেখা-পড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। সমাজের প্রতিটা শিক্ষিত ছেলেরই যে সরকারী চাকুরী হবে এমনটা নয়। সবাই পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স করে জুডিসিয়াল সার্ভিসে ক্যাডারভূক্ত কিংবা বিদেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করবে এমনটা সম্বল সবার নেই। যার ফলে শিক্ষানবিশদের একটা বড় অংশ অনার্স কিংবা মাস্টার্স শেষ করে সম্মানিত পেশা আইনজীবী হওয়ার দৃঢ় আকাঙ্খা নিয়ে এল.এল-বি ২বছর পাস কোর্স জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাশ করে। এদের চাপটা আরো বেশি কারণ লেখাপড়া শেষ করে অতিরিক্ত ডিগ্রী আইনে নিয়ে বয়স আরো বেশি হয় ফলে পরিবারের একটা বড় বোঝা তাঁরা। যেখানে এদের দ্রুততম সময়ে আইনজীবী সনদ খুব প্রয়োজন ছিল। সমাজের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। সেখানে বার কাউন্সিলের দীর্ঘ জটিলতার কারনে বছর বছর পরিবারের বোঝা হয়ে ডিপ্রেশনে ভোগে তাঁরা। যাঁর জ্বালা সেই বোঝে। বয়স বাড়লেও অনেকে না পারে বিয়ে করতে,না পারে কারো সঠিক জবাব দিতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতি ঘরে ঘরে একজনকে সরকারী চাকুরী দিবে এটা তিঁনি ঘোষনা দিয়েছেন। হয়তবা সেটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন। একটা পরিবারের সব সন্তানদের মানুষ করা যেমন বাবা-মায়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তেমনি একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীরও তার জনগণের ভাল-মন্দ দেখার দায়িত্ব। ফলে শিক্ষানবিশরা বার কাউন্সিলের দীর্ঘ্য সময় নিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি আর সইতে পারছে না। তারপরও এক ঝলক হাসির আশায় অনেক ধৈর্য্য সহ্য করে তিন ধাপে পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে একটা এম.সি.কিউ পরীক্ষার পর দীর্ঘ্য তিন বছর অতিক্রম করে ২০২০ সালের ২৮ফেব্রুয়ারীতে আর একটা এম.সি.কিউ পরীক্ষা নিতে সক্ষম হয় বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট কমিটি। নিয়ম অনুসারে এম.সি.কিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তিন মাসের মধ্যে রিটেন পরীক্ষা নিবে এনরোলমেন্ট কমিটি। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারীর কারনে সে রিটেন সময়মত নেওয়া সম্ভব হয়নি। আদৌ কবে যে এ রিটেন পরীক্ষা হবে তার খবর কারো কাছে নেই। ফলে জটিলতার উপর জটিলতা প্লাস। পরীক্ষাজট এটা পূর্ব অভিজ্ঞতা। এমন জটিলতা নিরসনে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আপীল বিভাগ ২০১৭ সালের পূর্নাঙ্গ রায়ের নির্দেশনানু্যায়ী প্রতি বছর আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিধান থাকলেও তা যথাযথ প্রতিপালন না হওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
দীর্ঘদিন পরীক্ষা না হওয়ার ফলে অনেক শিক্ষানবিশদের সম্মানীয় স্বপ্নের আইন পেশায় আসার পূর্বেই হারাতে হয়েছে অনেক কিছু। দীর্ঘদিন পরীক্ষার জটিলতা এবং বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে লিখিত পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এম.সি. কিউ উত্তীর্ণ ২০১৭ এবং ২০২০ সালের শিক্ষানবিশদের গেজেটভুক্ত করে সনদের দাবীতে সারাদেশে একযোগে গত ৯জুনে প্রতিটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বর্তমান ফেসবুক সহ সোস্যাল মিডিয়ায় এ স্মারকলিপির দাবীর পক্ষে বিপক্ষে চলছে আলোচনা সমালোচনা। শিক্ষানবিশদের এই দাবী বেশ ভাইরাল এখন গণমাধ্যম সোস্যাল মিডিয়ায়। এমনকি অনলাইন ও জাতীয় পত্রিকাতেও এ খবর প্রকাশিত।
আমাদের শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জোঁড়ালো যৌক্তিক দাবী বিবেচনায় নিয়ে গেজেটের মাধ্যমে বর্তমানে ২০১৭ সালে রিটেন এবং ভাইভায় যারা অকৃতকার্য হয়েছেন এবং ২০২০ সালে এম সি কিউ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের সর্বমোট সংখ্যা ১২,৪০০ জনকে আত্মকর্ম সংস্থানের সুযোগ দিয়ে আমাদের অবহেলিত জীবনকে সচল ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মমতাময়ী মা এবং সম্মানিত বার কাউন্সিলের নীতি-নির্ধারকগণদের কাছে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। দয়া করে এমন গেজেটের মাধ্যমে সনদ দিলেই অবহেলিত শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের পরিত্রান সম্ভব।
Discussion about this post