সাঈদ চৌধুরী: স্বাধীনতা দিবসের আগে ও পরে বাংলাদেশ নতুন সাজে সাজে। চারিদিকে রব রব ধ্বণি, জাতীয় সঙ্গীত, দেশের গান,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বজ্র ধ্বণিতে প্রকম্পিত হয় হৃদয়। যে যুদ্ধ দেখেনি সেও কল্পনায় ডুবে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠে! ঠিক এমনই সময় সবুজ ধান খেত আর বাংলার মাটির সবুজ ঘাসে স্বাধীনতা দিবসে লাল রঙের জামা পরিহিত একটি মেয়েকে নির্মমতার শিকার হয়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায়! এবার আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাল সবুজের পতাকা দেখার বিপরীতে দেখেছি একজন অসহায় মানুষের নিথর দেহের লাল বৃত্ত! পতাকা দেখা থেকে বঞ্চিত হয়ে স্বাধীনতার মাসে এমন চিত্র দেখার পর সত্যি করে বলছি একবারও মনে হয় নি আমি সঠিক বোধ নিয়ে বেঁচে আছি! এদেশের মাটিতে যতগুলো ভালো কাজ আছে তা সবগুলোই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় যখন আমরা অসহায়ের মত এই চিত্রগুলো বার বার দেখতে বাধ্য হই।
একজন নারী যে সব কিছু আগলে রেখে তার গর্ভে একজন শিশুকে বড় করে তোলে সেই শিশুই আবার নারী দেহের উপর নির্মম অত্যাচার চালানোর কৌশল শিখে একদিন সেই নারী দেহকেই ক্ষতবিক্ষত করে। বিষয়টা এমন দাঁড়াচ্ছে আমি যদি একটি দেশের সমস্ত সুবিধা ভোগ করি, একটি দেশের আলো হাওয়ায় বড় হওয়ার স্বাধীনতা পাই এবং আমিই যদি আবার সেই দেশকে ক্ষত বিক্ষত করি তবে তা যদি দেশদ্রোহীতা হয় তবে ধর্ষক কেন দেশদ্রোহী নয়?
ধর্ষকের শাস্তি নিয়ে কথা হয়, ধর্ষকের সামাজিক প্রতিরোধ নিয়ে কথা হয়, নতুন আইন তৈরী নিয়ে কথা হয় কিন্তু যারা একবার ধর্ষনের শিকার হয়ে যাচ্ছে তারা আসলে কি পেল এদেশ থেকে!
কিছু কিছু সময় অসহায়ত্ব আমাদেরকে একেবারে নিঃস্ব করে দেয়। আমাদের বর্তমান ক্রান্তিকালিন সময় অন্ধকার যুগকেও হার মানায়। বিউটির আগে একবার ধর্ষিত হওয়া, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা তারপর বিউটির মৃত্যু সব কিছুইতো অযাচিত হতাশার চিত্র এঁকে দেয় বার বার!
যারা ধর্ষন করতে পারে তারা দেশকেও শ্রদ্ধা করে না। মাতৃগর্ভের কথা কোন সন্তান চিন্তা করতে পারলে সে ধর্ষক হয়ে উঠতে পারে না। অবাধ সংস্কৃতি, ধর্মকে সঠিকভাবে না মানা অথবা পারিবারিক শিক্ষা না পেয়ে বেড়ে ওঠা।
আমরা যে দিকটার উপরই দোষ চাপিয়ে ধর্ষককে তার অপরাধ থেকে দূরে ঠেলে দিতে চাইনা কেন ধর্ষক অমানুষই, ধর্ষক দেশদ্রোহীই। শাস্তির ব্যপারে এবং আইন প্রনয়নের ব্যপারে সব দিকগুলো নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। এসিড সন্ত্রাস, বাল্য বিবাহ যেমনি কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে তেমনি ধর্ষনও কমিয়ে আনার প্রয়াস আরও দৃঢ়ভাবে নিতে হবে। ইভটিজিং থেকে শুরু করে কোন ধরণের নারীর প্রতি অসম্মান জনিত কাজের মামলা নেওয়ার ব্যপারে পুলিশকে আরও তৎপর ও গতিশীল হতে হবে। ধর্ষনের শাস্তি তদন্ত স্বাপেক্ষে সর্বনিম্ন যাবজ্জিবন ও সর্ব্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড করা হোক এবং তা কার্যকরের সময় সীমা করা হোক অনধিক তিনমাস। স্বাধীনতার পর লাল সবুজের পতাকার আর কোন রক্ত দেখতে চাইনা। এখনও যদি লাল সবুজে এভাবে রক্ত ঝড়তে থাকে তবে পতাকার সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তে ক্ষত সৃষ্টি হবে যা আমাদের ভালো থাকতে দেবেনা। আইনের সঠিক প্রয়োগেই ধর্ষন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে সবার আগে। তার সাথে সাথে আসুন আমরা নেশা বন্ধে কাজ করি। প্রতিটি মহল্লায় একটি করে পুলিশের সেল টিম গঠন করে প্রতিদিন অন্তত একবার টহল দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ধর্ষনের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর আইন ও তার প্রয়োগ দরকার তেমনি নেশার বিরুদ্ধেও আরও কঠো আইন ও এর প্রয়োগ দরকার। নেশাই ধর্ষনকে বেশী উৎসাহিত করে। লাল সবুজ পতার বাংলাদেশ আমাদের হৃদয়কে সুশোভিত করে আর সেই লাল সবুজ যাতে আমাদের না কাঁদায় এজন্যই কাজ করে যেতে হবে আমাদের সবাইকে।
লেখক: সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও রসায়নবিদ
Discussion about this post