প্রশ্নঃ আমি আমার ছোট ভাইকে বিদেশ পাঠানোর উদ্দেশ্যে আমাদের গ্রামের একজন প্রবাসী ভাইকে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। কথা ছিল, উনি তিন মাসের মধ্যে আমার ভাইকে বিদেশ নিয়ে যাবেন। কিন্তু, প্রায় একবছর হয়ে গেলেও উনি আমার ভাইকে বিদেশ নিচ্ছেন না। একেকবার একেক সমস্যার কথা বলে উনি শুধু আমাদেরকে ঘুরাচ্ছেন। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার ভাইকে আর বিদেশ পাঠাবো না, তাই ঐ প্রবাসী ভাইকে আমাদের টাকা ফেরত দিতে বলছি। কিন্তু, উনি এখন টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারেও তালবাহানা করছে। দিবো, দিচ্ছি এসব বলে আমাদেরকে একের পর এক তারিখ দিয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা ওনার উপর আর বিশ্বাস রাখতে পারছি না। তাই, আমরা এখন আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের টাকা গুলো ফেরত নিতে চাচ্ছি। আমাদের করনীয় কি?
হাবিবুর রহমান, গাইবান্ধা।
উত্তরঃ
ধন্যবাদ, আপনার প্রশ্নের জন্য। প্রথমত আপনাকে বলে রাখা ভালো যে, আদালতে কোন কিছু প্রমাণ করতে হলে মুখের কথা যথেষ্ট নয়, অবশ্যই লিখিত ডকুমেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। কাউকে টাকা ধার বা কোন কাজের জন্য দেওয়ার সময় অবশ্যই স্ট্যাম্প করে নেওয়া ভালো কিংবা তার কাছ থেকে চেক নিয়ে রাখা উচিত। তাহলে, সময়মত টাকা ফেরত না দিলে আপনি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু, আপনার এই প্রশ্ন থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আপনার সাথে আপনার ঐ প্রবাসী ভাইয়ের কোন লিখিত ডকুমেন্ট হয় নাই। যখন কোন লিখিত ডকুমেন্ট থাকবে না, তখন আপনাদের উভয়ের মধ্যকার ইমেইল বা মোবাইল ম্যাসেজ বা কথোপকথনের মাধ্যমে প্রমাণ করার যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি করতে হবে যাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, আপনি ঐলোককে টাকা ধার দিয়েছেন বা উনি আপনার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছেন। তাহলেই কেবল আপনি ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এবার আসুন কীভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন?
পাওনা টাকা আদায় কিংবা অন্য যেকোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আগে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন ঘরোয়া ভাবে সমাধান করতে। আত্মীয়-স্বজন বা এলাকার মুরুব্বীদেরকে দিয়ে সমাধান করানোর চেষ্টা করুন। শুরুতেই মামলা মোকদ্দমায় যাওয়ার দরকার নেই। এতে অর্থ এবং সময় ব্যয়ের পাশাপাশি দুইটি মানুষ তথা পরিবারের মধ্যকার সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে, যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন আইনের আশ্রয় নেওয়ার আগে নিজেরা নিজেরা সমাধান করে ফেলতে।
কিন্তু, ঘরোয়া ভাবে সমাধান না হলে তখনি কেবল আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন। সেক্ষেত্রে প্রথমে, ঐ লোককে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবেন। লিগ্যাল নোটিশে আপনি ঐ ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট সময় দিবেন যেমন ৩০ দিন। এই সময়ের মধ্যে ওনাকে আপনার পাওনা অর্থ পরিশোধ করার জন্য আহ্বান করবেন, অন্যথায় আপনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন হবে জানিয়ে দিবেন। তারপর, আপনার দেওয়ার সময় অপেক্ষা করবেন, তার মধ্যে অর্থ পরিশোধ করলে তো সমাধান হয়ে গেলো আর পরিশোধ না করলে তখন তার বিরুদ্ধে আপনি আপনার এলাকার দেওয়ানী আদালতে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মামলা করতে পারেন।
এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, আপনি শুধু যতো টাকা ধার হিসেবে দিয়েছেন, ততো টাকাই নয়, আপনি চাইলে আপনার পাওনা টাকার ইন্টারেস্টসহ মামলার খরচাদিও মামলার আরজিতে দাবী করতে পারেন। যথেষ্ট প্রমাণাদি দিয়ে প্রমাণ করতে পারলে, আদালতের মাধ্যমেই আপনি যথাসময়ে আপনার পাওনা টাকা আদায় করতে পারবেন। ধন্যবাদ।
প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন, এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
আইন সম্পর্কিত আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে ইমেইল বা ফোন করে জানাতে পারেন, আমরা আপনার প্রশ্নটি দিয়ে আরেকটি ‘আইনি জিজ্ঞাসা’র পর্ব তৈরি করার চেষ্টা করবো। আমাদের ইমেইল ঠিকানাঃ tanbir921535513@gmail.com মোবাইল নাম্বারঃ 01921 53 55 13.
Discussion about this post