বিডিলনিউজঃ বাংলাদেশের আসন্ন দশম জাতীয় নির্বাচন এবং চলমান অস্থির রাজনীতিতে ভারত যতটা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে, আমেরিকা সেই হিসেবে চুপচাপই বলা চলে। এই নিয়ে আমেরিকাকে ভারত চাপও দিয়ে আসছিল শেষ কিছুদিন ধরে। তবে, এখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আমেরিকা-ভারতের সম্পর্কের একটি নেতিবাচক দিক বিশ্ববাসী পরোখ করবে হয়তো।
গৃহকর্মীর ভিসা আবেদনে মজুরি নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়া এবং তাকে চুক্তি অনুযায়ী পারিশ্রমিক না দিয়ে বেশি কাজ করানোর অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়েকে গ্রেপ্তারের পর প্রকাশ্যে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায় নিউ ইয়র্কের পুলিশ। থানায় নেয়ার পর ওই কূটনীতিককে বিবস্ত্র করে তল্লাশি চালানো হয় এবং তাকে মাদক চোরাচালানী ও যৌনকর্মীদের সঙ্গে একই কারাকক্ষে রাখা হয় বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সুজাতা সিং ওই সফরে বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর বিষয়ে ভারতের অবস্থান ওয়াশিংটনের সামনে তুলে ধরেন, যার শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্যের বিষয়টি। দেবযানীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটি বার্তা দিতে চেয়েছে, যাতে আমরা ভেঙে পড়ি। এটা বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট কারণও আছে।”
তিনি জানান, এর আগে রাশিয়ার একাধিক কূটনীতিকের বিরুদ্ধে বীমা জালিয়াতির অভিযোগ উঠলেও মার্কিন প্রশাসন নিউ ইয়র্ক পুলিশ বা অ্যাটর্নির কার্যালয়কে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেয়নি।“দেবযানীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা তারা বলছে, রুশ কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর।”
“কিন্তু রাশিয়ানদের ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি, কারণ তাতে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হবে বলে মস্কো হুমকি দিয়েছিল।”ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে ভারত সরকার যে অবস্থান নিয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র হতাশ।
“এই মতপার্থক্যের বিষয়টি প্রকাশ্য। এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু সুজাতা সিং যখন ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, তখনই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এই শক্ত বার্তা দিতে চাইল।“এখন পুরো জাতি যুক্তরাষ্ট্রকে এই বার্তা পাঠাতে বলছে যে, তাদের ওই পদক্ষেপে আমরা চুপচাপ মেনে নিচ্ছি না।”
ভারতীয় এই কর্মকর্তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করত, তাহলে এ ধরনের কোনো কাজ তারা করত না। অথচ এর আগে বহু ঘটনায় ভারত ভাল বন্ধুর মতোই সাড়া দিয়েছে। ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় নয়া দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নিরাপত্তা চৌকি তুলে নেয়াসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে ভারত ইতোমধ্যে বুঝিয়েছে, দেবযানীকাণ্ডে তারা কতোটা ক্ষুব্ধ।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের জন্য বিমান বন্দরের পাস বাতিল এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জন্য আমদানি ছাড়পত্র প্রত্যাহারেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও তা বাতিল করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা রাহুল গান্ধী ও বিরোধী দলের নেতা নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া ভারতে অবস্থানরত মার্কিন কূটনীতিকদের ক্ষেত্রে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
ভারতের এই তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, তারা দেবযানীর বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছেন। আর সুজাতা সিংও দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ওয়াশিংটন নিজেদের অবস্থান থেকে না সরলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
Discussion about this post