তানজিম আল ইসলাম
দেশে করোনা পরিস্থিতির কারনে সুপ্রিম কোর্টেও সাধারন ছুটি থাকার কারনে রাষ্ট্রের নাগরিকের যে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার যে সাংবিধনিক সুযোগ সেটিও রুদ্ধ হয়ে গেলো। দেশে জরুরী অবস্থাও জারি নেই। আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার বলবৎ করার সুযোগ একেবারে বন্ধ থাকা উচিত নয়। এ জটিলতা নিরসনে কার্যকর বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে অনলাইনে। অন্তত একটি বা দুটি রীট বেঞ্চ অনলাইন ভিত্তিক চালু করা নিতান্তই প্রয়োজন। আইটি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে তা চালু করতে খুব জটিলতা হবে বলে মনে হয়না যদিও এ অনলাইন ভিত্তিক বেঞ্চ হবে সীমীত সময়ের জন্য ।
এজন্য কয়েকটি প্রস্তাবনা রাখতে চাই
১.অনলাইন বেঞ্চ চালুর জন্য প্রথমেই একটি সিস্টেম ডেভেলপ করা দরকার এবং গোটা সফটওয়্যারটি থাকবে সহজে ব্যবহার করা যায় এমন। এক্ষেত্রে সরকারের এটুআই যে প্রজেক্ট আছে তাদেও সহযোগিতা নিতে পারে।
২. অনলাইনে মামলার এপ্লিকেশন ফাইল পিডিএফ ফরমেটে ইনপুট দেয়ার সুযোগ থাকবে এবং আলাদা করে এনেক্স্চারগুলোর কপি পিডিএিফ বা জেপিজি ফরমেটে দেয়ার সুযোগ থাকবে। অনলাইনে ফাইল করার পর অটো একটি মামলা নাম্বার পড়বে। অপশন থাকবে কোন বেঞ্চে দাখিল করতে চায়। এর আগে তদবীরকারের আইডি র্কাড ভেরিফিকেশনের জন্য একজন কর্মকর্তা অনলাইনে চেক করে দিয়ে কনফার্ম করতে পারেন। তিনি সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদ্বয়ের কাছে রেফার করবেন ইমেইলে যা ঔ সিেিস্টমের সাথে সংযুক্ত থাকবে এবং একটি অটো আপডেট আইনজীবী চেক করে জানতে পারেবে তার মামলার সট্যাটাস সম্পর্কে।
৩. মামলা ফাইল করার পর সংশিল্ষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেলের কাছেও একটি কপি ্ইমেইলে সার্র্ভ করার ব্যবস্থা থাকবে। যদি রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য দিতে চায় তাহলে তিনিও লিখিতভাবে সাবমিশন অনলাইনেই দাখিল করতে পারেন। প্রয়োজনে বিচারপতিদ্বয় এবং রীটকারি আইনজীবী এবং ডেপুটি অ্যটর্নী জেনারেল একত্রে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা থাকবে।
৪. বিচারপতি মহোদ্বয় নিজেরা এ বিষয়ে আলাপ করে নিতে পারেন এবং আদেশ দিতে পারেন। প্রয়োজন হলে আবেদনকারি আইনজীবীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইেনে এসে ভিডিও কনফারেন্স কলে শুনানীর সময় ঠিক করে দিতে পারেন।
৫. কোন আদেশ হলে দুই বিচারপতি তাদের বেঞ্চ অফিসারের নিকট পাঠাবেন আদেশের ডিক্টেশন দিয়ে। টাইপ হওয়ার পর দুই বিচারপতি মহোদয় ইলেকট্রনিক সিগনেচার দিয়ে আদেশটি অনলাইনে দিবেন। তখন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সেটি সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট বাদী বিবাদীদের সরবরাহ করতে পারেন। তবে প্রশ্ন আসতে পারে রুলের রিকুজিট কীভাবে জমা দিবে। এক্ষেত্রে যেহেত অনলাইনে থাকবে তাই রিকুজিট জমা দেয়ার প্রয়োজন হবেনা।তবে সংশিল্ষ্ট কর্মকর্তা বিবাদীদের নিকট ইমেইলে আদেশের কপি সরবরাহ করতে পারে । এক্ষেত্রে অবশ্য রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তার ভেরিফিকেশন থাকতে পারে।
৬.এক্ষেত্রে একটি বার কোড ব্যবহার করতে হবে যাতে আদেশের বিষয়ে সত্যতা যাচাই করার সযোগ থাকবে।
৭. কম্পিউটার এবং অনলাইন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে এমন বিচারপতি মহোদ্বয়দের দিয়ে অনলাইন বেঞ্চ গঠন করতে হবে।
৮. আদালতের ছুটি শেষ হলে প্রয়োজনে মামলার হার্ডকপি দাখিল করতে পারে সংশ্লিষ্ট শাখায় এবং এখানে আলাদা ক্রমিক দেয়া থাকবে যাতে উল্লেখ থাকবে অনলাইন ভিত্তিক বেঞ্চে কার্যক্রম চলেছে মর্মে উল্লেখ থাকবে। রুল শুনানির সময় স্বাভাবিক কার্যক্রমই চলবে।
উপরোক্ত ব্যবস্থাগুরো জরুরী ভিত্তিতে চালু করার প্রয়োজন। আমাদের দেশে এত স্বল্প সময়ে সর্ম্পূণ ইজুডিশিয়ারি চালু করা সম্ভব নয়। ইজুডিশিয়ারি চালু করতে হলে র্দীঘদিন ধরে একটি অবকাঠমো গড়ে তোলা প্রয়োজন। কিন্তু দেশে এই অবস্থায় জনগনের মৌলিক অধিকার বলবতের সুযোগ থাকতেই হবে এজন্য সীমীত পরিসরে অনলাইন ভিত্তিক একটি বা দুটি রীট ব্ঞ্চে গঠন করা খুবই প্রয়োজন।
লেখক: আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
Discussion about this post