মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড এবং বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে দণ্ড ঘোষণার পর যেসব আসামি পলাতক রয়েছেন তাদের গ্রেফতারের পরেই দণ্ড কার্যকর করা যাবে।
আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছেন, জামায়াত নেতা আব্দুস সুবহান, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মোবারক হোসন, সৈয়দ কায়সারসহ অন্যান্যরা।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী গণমাধ্যমকে বলেন, সাজা ঘোষণার পরও পালাতক আসামিদের বিষয়ে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তারা গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণের পর আপিলের সুযোগ পাবে কি না সে সিদ্ধান্ত দিবেন আপলি বিভাগ। যদি আপিলের সুযোগ দেওয়া হয় তবে তা নিষ্পত্তির পর দণ্ড কার্যকর করা হবে।
প্রসিকিউটর সায়েদুল হক সুমন গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল থেকে দণ্ড ঘোষণার পরেও যারা পালাতক তাদের গ্রেফতার বা আত্মসর্পণের পর নিয়ম অনুযায়ী আপিল করতে পারবে। সুপ্রিম কোর্টে আপিল নিষ্পত্তির পর তাদের দণ্ড কার্যকর হবে।
এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে ২৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে এবং বিচার চলাকালে মারা গেছেন দশজন। তাদের দু’জন বিচার চলাকালে এবং আটজন তদন্ত চলাকালে মারা গেছেন। এরা হলেন, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও নেতা আব্দুল আলীম। ফলে তাদের আপিলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এছাড়া বিচার শেষ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফ ও রায় অপেক্ষমান থাকা অবস্থায় বাগেরহাটের আব্দুল লতিফ তালুকদার মারা গেছেন। যশোরের কেশবপুরের মো. লুৎফর রহমান মোড়ল, তদন্ত শেষে কক্সবাজারের মহেশখালীর শামসুদ্দোহা ও মো. জিন্নাহ ওরফে জিন্নাত আলী, নেত্রকোনার পূর্বধলার আহাম্মদ আলী, ময়মনসিংহের মো. আমজাদ আলী এবং তদন্তাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের এমদাদুল হক ওরফে টাক্কাবালী।
অপরদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর পাঁচ নেতার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এরা হলেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী এবং জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী। এছাড়া মীর কাসেম আলীর দণ্ড নিয়ে করা রিভিউ নিষ্পত্তি হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা না চাইলে নিয়ম অনুযায়ী তার দণ্ড কার্যকর হবে।
চার মামলায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক পাঁচজন আপিল না করায় গ্রেফতার হলেই ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনা রয়েছে। তারা হলেন, জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার বহিষ্কৃত মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক নেতা জাহিদ হোসেন খোকন এবং কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার সৈয়দ মো. হাসান আলী ওরফে হাছেন আলী। এছাড়া কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, যশোরের পৃথক পৃথক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পালাতকদের খোঁজ নিতে সরকার ইন্টারপোলে পরোয়ানা জারির নোটিশ জারি করেছেন।
এ পর্যন্ত মানবতাবেরাধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন কিম্বা হতে যাচ্ছেন ৬১ মামলায় মোট ১৬৭ ব্যক্তি এবং সংগঠন হিসেব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সুপ্রিম কোর্টে ১২ জনের আপিল শুনানির জন্য রয়েছে: তারা হচ্ছেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার ও সাবেক জামায়াত নেতা মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক এমপি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, নেত্রকোনার মো. ওবায়দুল হক তাহের, রাজাকার আতাউর রহমান ননী এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার পলাতক রয়েছেন। তার সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাগেরহাটের সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আকরাম হোসেন খাঁন এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মো. ফোরকান মল্লিক, করিমগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী শামসুদ্দিন আহমেদ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার দণ্ডের বিরুদ্ধেও আপিল করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১০ আগস্ট এক রায়ে যশোর ৬ আসনের সাবেক এমপি মাওলানা শাখাওয়াত হোসেনের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। সূত্র: জাগোনিউজ।
Discussion about this post