আগাম জামিন বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আগাম জামিন সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৮ জুন রিভিউ আবেদন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন দেওয়া প্রসঙ্গে গত বছরের ২০ মার্চ সাত দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ।
খন্দকার মোশারফ হোসেনকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ বাতিল করে আপিল বিভাগ বলেন, ‘হাইকোর্ট (সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ) আপিল বিভাগের দেওয়া নীতিমালা অনুসরণে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা কেবল এটাই বলছি, হাইকোর্ট বিভাগের ওই দ্বৈত বেঞ্চ পরিহাসমূলক (প্যারাডক্সিকাল) আগাম জামিনের আদেশ দিয়েছেন’।
রায়ে বলা হয়, ‘আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের বিবেচনা খুবই বিস্তৃত। এটা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত যে, আইনি নীতির ভিত্তিতে বিচারিক বিচক্ষণতা বেষ্টিত হবে এবং স্বেচ্ছাচারী বিবেচনার ওপর ভর করে হবে না। অবশ্যই এজাহারের খুটিনাটি বিষয়ে বিচারকের চিন্তায় এবং আদেশে তার প্রতিফলন থাকবে যে, তারা ঘটনাটি (ফ্যাক্ট) ও অভিযোগসমূহ সর্বতোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন।’
রায়ে আরও বলা হয়, ‘কখনও কখনও কোনো আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ধরন গুরুতর হলে গ্রেফতার পূর্ব জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা জরুরি। কারণ, আদালত সব সময় এই অন্তদর্শন লালন করেন যে, শেষ পর্যন্তও যেন অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। নইলে সভ্য সমাজের গঠন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। বিচারক কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্তের ও সামগ্রিকভাবে সমাজের স্বার্থের বিষয়ে অচেতন থাকতে পারেন না। অভিযুক্তের জামিনের কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন ক্ষেত্রে আগাম জামিন প্রদানের আগে অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।’
‘আপিল বিভাগ মনে করেন, গ্রেফতার পূর্ব জামিন একটি অসাধারণ প্রতিকার এবং অসাধারণ ও ব্যতিক্রমী কোনো পরিস্থিতিতেই কেবল যথাযথ ও বিচারবুদ্ধিতার বোধগম্য চর্চার মাধ্যমেই আগাম জামিন মঞ্জুর করা যেতে পারে’।
মামলা মিথ্যা অথবা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে মামলা কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট ও নিম্ন আদালতের বিচারকরা সরকারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন- এসব অভিযোগ আগাম জামিনের ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে রায়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘বিচার ব্যবস্থার পূর্ব ধারণায় আগাম জামিনের বিবেচনা হতে পারে এটি আশ্চর্যজনক কোনো ঘটনা’।
রায়ে বলা হয়, ‘ইতোপূর্বে রাষ্ট্র বনাম জাকারিয়া পিন্টু মামলা (৬ জুন’২০১০) ও রাষ্ট্র বনাম আবদুল ওহাব শাহ চৌধুরী (২৫ মে’১৯৯৯) মামলার রায়ে উচ্চ আদালত কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন।’
আপিল বিভাগের সর্বশেষ রায়ে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যাশিত শ্রম দিয়ে হাইকোর্টকে অবশ্যই এজাহারের ঘটনা খুটিয়ে দেখতে হবে। অভিযোগের ধরন যদি জঘন্য হয়, তবে অবশ্যই আগাম জামিন মঞ্জুর করা যাবে না।’
‘সকল দিক সন্তোষজনক হলে হাইকোর্ট অবশ্যই কোনো ধরনের রুল ইস্যু ছাড়াই আগাম জামিনের আবেদনসমূহ তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি করতে পারেন। তবে এ ধরনের জামিনের মেয়াদ চার সপ্তাহের বেশি হবে না’।
‘আবার চার্জশিট প্রদানের পরের ধাপে অবশ্যই আগাম জামিন টিকে থাকবে না। হাইকোর্টের বিচারককে অবশ্যই অভিযুক্তের আগাম জামিন মঞ্জুরের কারণ এবং সন্তুষ্টির দিকগুলো উল্লেখ করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারকদের বিরুদ্ধে যদি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে এবং সন্দেহ থাকলে তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে’।
রায়ে আরও বলা হয়, ‘কারও জন্য বিবেচনার দরজা খুলতে তাদের (বিচারক) এই মর্মে সন্তুষ্ট হতে হবে যে, গড়পড়তা দাবির ওপর বিশ্বাস না করে সুনির্দিষ্ট, স্পষ্ট, যৌক্তিক, বিশ্বাসযোগ্য কারণ এবং যথেষ্ট ব্যাখ্যাসহ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হচ্ছে’।
Discussion about this post