গত দুই মাসে ‘বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী’ সন্দেহে ভারতের মুম্বাইয়ে আটক হয়েছেন ৯ ব্যক্তি। আটক ব্যক্তিরা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নিজেদেরকে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক দাবি করছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, এরইমধ্যে আইনি সুরক্ষা চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তারা। পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি আইনি সহায়তা সংগঠন বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ ওই ব্যক্তিদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
আটক ব্যক্তিরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে যে লিখিত আবেদন করেছে, তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের হাতে এসেছে। ওই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিরা হলেন শফিকুর সরকার, হাসিরা বিবি, কাজল শেখ, সুমন মোল্লা, নূর হক মোল্লা, আসগর আলী মোল্লাহ, রকিবুল মোল্লাহ, নারগিস খাতুন ও রিনা বিবি। আটকদের মধ্যে একই পরিবারের চার সদস্য রয়েছে। গত ১৪ই ডিসেম্বর ও এ বছরের ২৫ শে জানুয়ারি পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে মহারাষ্ট্র থেকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার আটক ব্যক্তিদেরকে মুম্বাইয়ের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হয়। তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে দেন বিচারক।
আটককৃতদের পরিবারের দাবি, তারা পূর্ব বর্ধমানের কালনার অধিবাসী। তাদের দাবি অনুযায়ী, আটকের আগ পর্যন্ত তারা মুম্বাইয়ের রেই রোড ও দারুখানা এলাকায় গত ২৫ বছর যাবত বসবাস করছিলেন। কালনার একজন অধিবাসী শেখ হাবিব আলী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ভোটার আইডি ও আধার কার্ড দেখানো সত্ত্বেও তাদেরকে বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাঠানো হয়েছে জেলে।
হাবিব আলী জানান, গ্রেফতারের পর পুলিশ তাদেরকে জন্ম সনদ দেখাতে বলেছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে তা ছিল না। হাবিবের দাবি অনুযায়ী ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে তারা মুম্বাইয়ে বসবাস করছিলেন। তাদের বয়স ৫০ বছরের ওপরে। শেখ হাবিব আলীর প্রশ্ন, কিভাবে তারা জন্ম সনদ দেখাবে? তিনি বলেন, ‘প্রকৃত সত্য হলো তারা আমাদের গ্রামের বাসিন্দা ও ভারতের নাগরিক। পশ্চিমবঙ্গের এসব নিরীহ মানুষকে পুলিশ হয়রান করছে। এ বিষয়ে আমি কালনার এসডিও’কে একটি চিঠি লিখেছি। তাতে এ বিষয়ে তাকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছি।’ শেখ হাবিব আলী আরও জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস দলের এমএলএ এবং রাজ্যের উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে অবহিত করেছেন। স্বপন দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন এ বিষয়টি তাকে এখনও জানানো হয় নি। জানতে পারলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
আটক ব্যক্তিদের পরিবারের একজন সদস্য আলী আকবর মোল্লা। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পক্ষে তিনি জামিন আবেদন করেন। এতে তিনি বলেন, ২৫ শে জানুয়ারি আমার পরিবারের ৬ সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে ঢুকিয়েছে। আমার দু’ভাতিজা, তাদের স্ত্রীরা ও দু’সন্তানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ তাদের ভোটার আইডি ও আধার কার্ড আমলে নেয় নি। সোজা পাঠিয়ে দিয়েছে আদালতে। আলী আকবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা বাংলাভাষায় কথা বলি। শুধু এ কারণে আমাদেরকে বাংলাদেশী বলা যায় না। আমরা যে বাংলাদেশী এমন কি প্রমাণ আছে?’ আলী জানান, আইনি সহায়তা পেতে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পর্যন্ত যাবেন। মুম্বাই পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত কমিশনার রবীন্দ্র শিসভে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পর্কে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই। তবে গত এক মাস ধরে পুলিশের এই শাখা শতাধিক অবৈধ অভিবাসীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি।’
আটক ব্যক্তিদের দাবি সম্পর্কে রবীন্দ্র শিসভে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, অনেক সময় দেখা যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভুয়া নথি ব্যবহার করে। আদালত মামলাটি পর্যালোচনা করে দেখছে বলে জানান তিনি। আটক ব্যক্তিরা ভারতীয় নাগরিক হলে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে। তিনি বলেন, যদি তাদের কাছে যথাযথ আইডি বা পরিচয়পত্র থাকে তাহলে তো আদালত তা যাচাই করে দেখবে। বিষয়টি আদালতেই সমাধান হয়ে যাবে।
বেসরকারি সংগঠন বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ গ্রেপ্তার হওয়া পরিবারগুলোকে আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। অন্য রাজ্যে বাঙালিদের ওপর নিপীড়ন রুখতে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে সোচ্চার হতে বলেন তিনি। এ গ্রুপের সভাপতি সামিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এ মামলার আইনগত সব বিষয় আমরা দেখতে শুরু করেছি। সব অবিচারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করবো।’
Discussion about this post