অতি আদরের মেয়েগুলোর আদর কেমন হয় শুধু মাত্র বাবা আর মেয়েই জানে । এ আদর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও বলা যায় । কিন্তু এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে বাবাকে ধরে মুখ লুকিয়ে রেখেছে ছোট্ট শিশুটি ! নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার হাড়ুয়া গ্রামের এই ছোট্ট শিশুটি ধর্ষনের শিকার হয় এবং ধর্ষনের বিচারে গড়িমসি দেখে মেয়ের বাবা সংবাদ সম্মিলন করে ধর্ষনের বিচার চাইতে আসে !
কি অপরাধ এরা করেছে যে সবগুলো মানুষের সামনে এসে নিজেদের অপারগতার কথা এভাবে বলতে হল ! এখানে প্রশ্ন আসে যারা অপরাধ করছে তারা কি তবে অপরাধটিকে অধিকার ভাবছে ? আর সে অধিকারকে কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে গ্রহনযোগ্যতা দিয়ে দিচ্ছে ?
অবাক হওয়ার মত ব্যপার হল এই ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে কিভাবে আবার মানুষের লোভাতুর দৃষ্টিতে পড়ে এবং যারা অপরাধ করেই ফেলছে তারা কিভাবে বিচারের বাইরে চলে যাওয়ার মত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ দেখাতে পারে । একটা হল নৈতিকতার বিপর্যয় আর আরেকটা হল দাসত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা দেখানো তীব্র আকাঙ্ক্ষা !
সামাজিক মানুষ দাবী করা এই আমরা হাস্যকর ভাবে বলে থাকি আমরা দেশ, সরকার, সমাজের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ । যদি দায়বদ্ধই হই তবে এই মেয়েটির ছবি এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসতে পারে ? যে ছেলেটি ধর্ষন করেছে সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে বলে অন্তর্বতীকালীন জামিন পেয়েছে এবং তার পর থেকেই পায়তারা চলছে মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার । এর আগে মেডিকেল রিপোর্ট নিয়েও করা হয়েছে দুর্নীতি । পাঁচদিন পর মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিয়ে উপজেলার আবাসিক চিকিৎসক ডা: ডলি রানি এবং এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই দেওয়া হয় জামিন ! সেখানে ধর্ষনের কথা না বললেও শিশুটি ব্যবস্থা পত্রে দেওয়া হয় উচ্চ মাত্রার এনিটবাযোটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ !বলা হয় শিশুটির মানসিক অবস্থাও খারাপ ! (সূত্রঃ ১৬.০২.২০১৮দৈনিক খোলা কাগজ)
যে বিচারগুলো রাষ্ট্রের কাছ থেকেই পাওয়া অধিকার একজন সাধারণ মানুষের সে বিচার পেতে যদি হেনস্থা হতে হয় তবে সাধারণ মানুষগুলো যাবে কোথায় । ধর্ষণের শিকার কোন মেয়েকে নিয়ে যদি এভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে হয় তবে আমরাই বা সমাজে বসবাস করি কিভাবে ! লজ্জা নিবারণের আর কোন জায়গা নেই ।
গ্রাম্য সালিশেই যদি এই বিচারিক কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হয় তবে সারা জাতির সামনে এমন লজ্জা নিয়ে দাড়াতে হত না এই বাবা মেয়ের !
আইনের প্রয়োগ সাধারণ জনগনের অধিকার সুরক্ষা করবে এটাই আশা আমাদের । আমরা এমন ছবি বা আচরণ দেখতে চাইনা যা আমাদের সাধারণভাবে বেঁচে থাকার অধিকারেও হাতুড়িপেটা করে । আমরা সঠিক বিচার চাই যে কোন অপরাধের । অপরাধের বিচার না হলে অপরাধ কমানো দায় হয়ে পড়বে আর ঘাণি টানতে হবে আমাদের সারা জাতির । রাষ্ট্রযন্ত্র দ্রুত এই অপরাধির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবে এটাই আমাদের কামনা ।মেয়েটিকে সর্বোচ্চ কাউসিলিংয়ের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যও সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট আবেদন করছি ।
লেখকঃ সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
ও রসায়নবিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post