দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে খালি করে ফেলা এ কারাগারে এখন খালেদা জিয়াই একমাত্র বন্দি। তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কারাগারের ভেতরে ও বাইরে নিয়োজিত রয়েছেন একশ’র বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। বৃহস্পতিবার রাতে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে এ চিত্র দেখা গেছে
রাতে সরেজমিন দেখা গেছে, কারা ফটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারাগার সংলগ্ন চারটি সড়কে ব্যারিকেড বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। ফটকের সামনে অবস্থান করছেন গোয়েন্দারাও। এছাড়া, ফটকের ভেতরে ও বাইরে রয়েছেন কারা নিরাপত্তারক্ষীরা। নিয়মিত টহলে রয়েছেন র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা।
ব্যারিকেড বসিয়ে বন্ধ করে দেওয়া সড়কগুলো হলো নাজিম উদ্দিন সড়ক, জেলখানার ঢাল, বেগমবাজার সড়ক ও ১নং জেল রোড। নাজিমউদ্দিন সড়কের শাহী মসজিদের সামনে, জেলখানা ঢালের কারা ফটক মোড়ে, বেগমবাজার সড়ক মোড়ে ও ১নং জেল রোডের হাজী সেলিম টাওয়ারের সামনে ব্যারিকেডগুলো বসানো হয়েছে।
প্রতিটি ব্যারিকেডে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে কমপক্ষে ১৫ জন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। বংশাল ও লালবাগ থানার পুলিশ সদস্যরা এ দায়িত্ব পালন করছেন।
১নং জেল রোডে দায়িত্বে থাকা বংশাল থানার এসআই মাসুক মিয়া বলেন, ‘এই ব্যারিকেডে আমরা বংশাল থানার ১৭ জন আছি।’ লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুভাষ কুমার বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যারিকেডগুলো বসানো হয়েছে। এখানে আমাদের ৩০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।’
ব্যারিকেডের ভেতরে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চলাচলে বাধা থাকলেও এলাকার বাসিন্দারা প্রবেশ করতে পারছেন। তবে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের ছাড়া হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন বাসিন্দা।
নাজিম উদ্দিন সড়কের বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, ‘অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য স্বাভাবিক চলাফেরা করা যাচ্ছে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।’ একই কথা বলেন বেগমবাজার সড়কের একজন দোকানদার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ব্যারিকেড এলাকার ভেতরের দোকান খুলতে দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সাধারণ মানুষ আসতে না পারায় বেচাবিক্রি হচ্ছে না।
তবে এলাকার বাসিন্দাদের কোনও ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে না বলে জানান নাজিম উদ্দিন সড়কের ব্যারিকেডের দায়িত্বে থাকা বংশাল থানার এসআই ছমির। তিনি বলেন, ‘আমরা বাইরের কাউকে আসতে দিচ্ছি না। তবে ভেতরের বাসিন্দাদের আটকানো হচ্ছে না।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অন্য আসামি তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
আদালতের রায়ের পর খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের অফিস ভবনে। মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বামেই সিনিয়র জেল সুপারের যে অফিস কক্ষ ছিল, সেখানেই তাকে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা।
বর্তমানে এই কারাগারে আর কোনও বন্দি নেই। ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই ভোর সাড়ে ৬টার থেকে শুরু করে সারাদিন রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোড থেকে সাড়ে ছয় হাজার বন্দিকে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার বন্দিশূন্য ছিল।
Discussion about this post