পরাশ্রীত এক জীর্ণ নৃ-গোষ্ঠীর মতো জাতি হিসেবে বলার মতো কি ছিলো আমাদের? অসীম শূন্যতা আর অজ্ঞতাকে ছাপিয়ে ভুখা-ফাকা একটা জাতিকে হটাৎ একজন স্বপ্নবাজ দার্শনিক স্বাতন্ত্র্যবাদ আর স্বাধীনতার গল্প শোনাতে শুরু করলো। নিয়তির দোহাই দিয়ে যুগের পর যুগ নিপীড়িত হওয়াকেই স্বাভাবিক জীবন ভেবে আসা শীর্ণকায় মানুষগুলো যেন রাজনীতির সেই বিস্ময়কর কবির মোহনীয় গল্পের মাঝে নিজের মা আর মাটির গন্ধ উপলব্ধি করতে শিখলো। নিজেদের অস্থিত্বের প্রশ্নে গায়ে চেপে বসা অপশক্তিকে ঘাড়বাঁকা করে “পায়ের নিচের মাটিটুকু শুধুই আমার” বলে দাবি করার প্রথম সেই ধৃষ্টতা, মা আর মাটিকে আগলে রাখার সেই প্রতিজ্ঞা, শেষমেষ জাতিস্বত্তাবোধ আর অধিকার আদায়ের ইতিহাসে অবধারিত অংশ, সংগ্রাম! যুদ্ধ!! দুর্দান্ত প্রতাপে পৃথিবীর ইতিহাসে আরো একটি জাতি যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে, নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিলো। প্রচন্ড গর্বের এই অংশটুকুই বাঙালি জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। যার পুরোটা জুড়ে ছিলো একটি নাম, বঙ্গবন্ধু! পুরো বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলো কিভাবে একজন অবিসংবাদিত নেতা পুরো একটা জাতিকে এক বাক্যে এক কাতারে নিয়ে আসতে পারেন! অথচ, কে ভেবেছিলো সেই সংগ্রামই হবে আমাদের সর্বশেষ রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস? একাত্তরের আগে ছিলাম পরাধীন গোলাম, পঁচাত্তরের পর অদ্যবধি আছি স্বাধীন অনাথ হয়ে!
স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় যে জাতি তাদের সারাজীবন পাগলের মতো ভালোবেসে যাওয়া লোকটার বুকে গুলি চালিয়ে দিতে পেরেছে, পরিণত বয়সে এসে সেই জাতির ধারাবাহিকভাবে বছরের পর বছর দুনিয়ার সেরা দূর্নীতিবাজ হওয়া, হাজারো অনিয়ম যুগযুগ ধরে নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাওয়া, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সামান্য কয়েকটা হুম-হত্যার আয়োজন করা ইত্যাদি সর্বদলীয় ঘটনা আমাকে কখনো বিস্মিত করে না। এমনকি অধিরাষ্ট্রিক আগ্রাসনে কোনদিন চুড়ান্ত জাতিগত পতন হলেও আমরা হয় নিঃশ্চুপ থাকবো নাহয় দালালী করে হলেও ব্যক্তি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। কারণ দেশ কিংবা ভিন্নদেশ যেকোন অপশক্তির অন্যায় আবদার কিংবা শোষণের বিপরীতে চোখে চোখ রেখে আঙুল উঁচিয়ে প্রতিবাদ করার মতো বুকের পাটা শুধু একজন বঙ্গবন্ধুর-ই ছিলো। পঁচাত্তরের নারকীয়তার পর এদেশে কোন নেতা জন্মায় নি, কখনো জন্মাবে বলে আর প্রত্যাশাও করি না।
প্রত্যেক বাংলাদেশীর গভীর আর্তনাদের এই দিনে [যে দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে না এলে, আজকের বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে অন্যরকম হতো] বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় আবেগের জায়গা, রাজনৈতিক প্রেরণার সর্বশেষ বিশুদ্ধ উৎস, সন্তানের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া পৃথিবীর একমাত্র অভাগা জাতির পিতাকে স্মরণ করছি পরম শ্রদ্ধা আর নির্মোহ ভালোবাসায়।
এডভোকেট শহিদুল ইসলাম
জজকোর্ট, শরীয়য়পুর।
ফোনঃ০১৭১৭৭৫৪৪২২
Discussion about this post