[responsivevoice_button voice=”Bangla India Female” buttontext=”Listen to Post”]
কক্সবাজার প্রতিনিধি: সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ নিহতের ঘটনায় মামলা করেছেন তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে প্রধান আসামি ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে। মামলায় আরো সাত পুলিশ সদস্যের নাম দেওয়া হয়।
আজ বুধবার (০৫ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে অ্যাডভোকেট মো. মোস্তফার নেতৃত্বে মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
পরে মামলার প্রধান আইনজীবী মো. মোস্তফা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে টেকনাফ থানাকে এটি হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে কিনা তা সাত দিনের মধ্যে আদালতকে অবগত করারও আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই মামলাটি র্যাব ১৫-এর কমান্ডার আজিম আহমেদকে তদন্ত করার নিদের্শ দেন আদালত।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে এসে একটি মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সামনে পৌঁছান তিনি।
উল্লেখ্য, নিজস্ব প্রাইভেটকারে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার সময় ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তকাজ শুরু করেছে। সিনহা মৃত্যুর ঘটনায় তার মা নাসিমা আক্তারকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, সিনহার বাড়ি যশোরের বীর হেমায়েত সড়কে। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ খান অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন। ৫১ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেছিলেন সিনহা।
২০১৮ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ভ্রাম্যমাণ এক ব্যবসায়ী জানান, মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে একটি প্রাইভেটকার পৌঁছলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ব্যারিকেড দেন।
এ সময় হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমে আসেন একজন (সিফাত)। এর পর নিজের পরিচয় দিয়ে হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামেন মেজর (অব.) সিনহা মো, রাশেদ। তিনি নামার সঙ্গে সঙ্গে কোনো জিজ্ঞাসা না করেই গুলি ছোড়েন লিয়াকত আলী। মুহূর্তেই সিনহা মাটিতে ঢলে পড়েন।
একপর্যায়ে ১০-১২ মিনিট পর সাদা নোয়াহ (মাইক্রোবাস) যোগে ঘটনাস্থলে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ উপস্থিত হন। কয়েক মিনিট পর একটি মিনি ট্রাকে (পিকআপ) সিনহা মো. রাশেদকে তুলে কক্সবাজারের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন ওসি।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হামিদ আরও বলেন, ‘আমার চোখের সামনে ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা কখনও ভোলার নয়।’
তবে পুলিশের ভাষ্য ভিন্ন। পুলিশ বলছে– চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে সিনহা বাধা দেন। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে রাশেদ পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পর কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শামলাপুরের লোকজন ওই গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে পুলিশকে খবর দেন।
এ সময় চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু গাড়ির আরোহী পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়।
এতে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই সিনহার মৃত্যু হয়েছিল। শনিবার সকালে তার ময়নাতদন্ত হয়েছে। তার বুক ও পিঠে জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়।
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে সমন্বয়সভা করেছেন।
এ সময় কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপপুলিশ মহাপরিদর্শকের মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মোহাম্মদ জাকির হোসেন, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের মনোনীত লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো. শাহাজান আলী উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post