শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য উচ্চ শিক্ষিত বেকারত্বের এক ভয়াল দশা !
কিভাবে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের এই ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হলো?
শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা শুধু দেশ ই না বরং বিশ্বের প্রেক্ষাপটে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করার পরেও বছরের পর বছর তাদের বেকারত্বের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। এই সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো,সকল শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের ই লক্ষ থাকে বিজ্ঞ আইনজীবী হবে। বিজ্ঞ আইনজীবী হতে হলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক এনরোলমেন্ট পরীক্ষার সমস্ত প্রসেস শেষ করে সনদ নিতে হয়।
এই এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে ইন্টিমেশন জমা দিতে হবে এবং ইন্টিমেশন পিরিয়ড ৬ মাস হলেই বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এই বিবেচনায় তাহলে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের ৬ মাস পর পরই পরীক্ষা হওয়ার কথা কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন! ২০১২ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক ৬ মাস পর পরই পরীক্ষা নেয়া হতো,তখন এনরোলমেন্ট প্রসেস ছিলো শুধুমাত্র রিটেন এবং ভাইভা।২০১২ সাল থেকে এনরোলমেন্ট প্রসেসে এম সি কিউ পরীক্ষা যোগ হলো। তারপরই ৩ ধাপের পরীক্ষা শেষ করতে ৬ মাস না বছর লেগে যেতে শুরু করল এভাবে ধীরে ধীরে দীর্ঘায়িত হয়ে এখন পরীক্ষা হয় ৩ বছর পর পর! সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এম সি কিউ পরীক্ষা হয় ৩ বছর পর! ২৮ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পূর্বে পরীক্ষার জন্য শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতে অনশন পর্যন্ত করেছে! যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষার দীর্ঘ জট নিরসনে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি করে আসছে কিন্তু এনরোলমেন্ট কমিটি শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখানোর প্রয়োজন মনে করেণাই।
২০১৭ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম দারুল ইহসান মামলার আপীল বিভাগের পূর্নাঙ্গ রায়ের ১২ নাম্বার নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পূর্ণ করতে হবে! অথচ বার কাউন্সিল সেই রায়ের নির্দেশনার পরে ২ বছর কোন এনরোলমেন্ট পরীক্ষাই নেয়নি!
তাহলে এই রায় অনুসরণ না করা কি সম্পূর্ণ আদালত অবমাননা নয় কি?
বিজ্ঞ এনরোলমেন্ট কমিটি ভালো উত্তর দিতে পারবেন!
২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এম সি কিউ শেষ হওয়ার পর বৈশ্বিক মহামারীর কারণে লিখিত পরীক্ষা কবে হবে তা এখন সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত! তাহলে এই এনরোলমেন্ট প্রসেস কবে শেষ হবে তা মহান আল্লাহই ভালো জানেন!
আজ দীর্ঘ ২ মাস দেশের সমস্ত আদালত বন্ধ।পরীক্ষার জটের কারণে প্রায় ৬০,০০০ উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী বেকারত্বের নিঃশ্বাস ফেলছে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ঘাড়ের উপরে!
রাষ্ট্রের একজন নাগরিক এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে আমার প্রশ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে—
আইন পেশা সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন কর্মমুখী পেশা।এই পেশার জন্য সরকার থেকে কোন বেতন, ভাতা কিছুই দেয়া হয়না। তাহলে শুধু শুধু পরীক্ষার এই জটের জন্য হাজার হাজার বেকার তৈরি করা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির জন্য বড় এক বাধা না?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের অনুরোধে দেশে আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গিকার করেছেন।
কিন্ত এই আইন বিশ্ববিদ্যালয় হলে কি লাভ হবে? যদি সেখান থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আইনজীবী হওয়ার জন্য বছরের পর বছর পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ঘাড়ের উপর বেকারত্বের নিঃশ্বাস ফেলতে হয়!
আইনজীবীদের জন্য বার কাউন্সিল এবং বার এসোসিয়েশন থেকে বিভিন্ন অংকের প্রনোদনা দিলেও শিক্ষানবিশদের জন্য কেউ কোন কথাই বলার প্রয়োজন মনে করেণি! এই মূহুর্তে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বঞ্চিতরাই হলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী!
আগামীকাল ঈদ! শিক্ষানবিশরা আদালতে প্রতিদিন ২০০-১০০ করে যা উপার্জন করত তাও এই মহামারীর কারণে দুই মাস বন্ধ। এখন তারা সম্পূর্ণভাবে পরিবারের উপর নির্ভরশীল! দেশীয় প্রেক্ষাপটে নিশ্চয়ই কোন পরিবারই তাদের ছেলে মেয়েকে মাস্টার্স পাশ করিয়ে বেকারত্বের ভার নিয়ে খুব সুখে নেই! আর সেখানে প্রতিনিয়ত একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর হীনমন্যতায় ভুগতে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা!
আগামীকাল ঈদ সত্যি, কিন্তু শিক্ষানবিশদের জন্য কোন ঈদ নাই! তাদের জন্য ঈদের দিন প্রতিদিনের ন্যায় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামের একটি দিন মাত্র!
পরিশেষে, শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের অভিভাবক বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং পুরো দেশের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ, শিক্ষানবিশরা সম্পূর্ণ বঞ্চিত এবং অতি মানবিক জীবনযাপন করছে। বৈশ্বিক এই মহামারীর কথা বিবেচনা করে এবং আপীল বিভাগের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মুজিব বর্ষে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জট নিরসনে ২০২০ সালের ভিতরেই এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পূর্ণ করে সনদ দিলে সমস্ত শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা আপনাদের উপর চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে।
Discussion about this post