বারবার তাঁকে তলব করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এক বারও হাজিরা দেননি তিনি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করল শীর্ষ আদালত। ৩১ মার্চ তাঁকে আদালতে হাজির করতে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিংহ খেহরের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। স্বাধীন ভারতে এর আগে কর্মরত কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হওয়ার নজির নেই। তবে বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা জামিনযোগ্য।
মাদ্রাজ হাইকোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্টে নিজের বদলির আদেশ স্থগিত করে শিরোনামে এসেছিলেন বিচারপতি কারনান। বিচারবিভাগে দুর্নীতি নিয়ে চিঠির প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে শীর্ষ আদালত। সেই মামলাতেই প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বিচারপতি কারনানকে আদালতে তলব করে। তার জবাবে বিচারবিভাগে জাতপাতের বিদ্বেষের অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টকে বিস্ফোরক চিঠি লেখেন কারনান। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন তিনি। উচ্চবর্ণের বিচারপতিরা তাঁকে সরানোর চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন। শীর্ষ আদালতের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে লেখা চিঠিতে বিচারপতি কারনানের আর্জি ছিল, বর্তমান প্রধান বিচারপতির অবসরের পর যেন তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া আদালত অবমাননার বিচার করা হয়। প্রয়োজন হলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক।
সেই মামলাতেই গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি কারনানকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচার এবং প্রশাসনিক কাজ থেকে সরিয়ে দেয়। বিচারপতি কারনানের জিম্মায় থাকা বিচার ও প্রশাসনিক বিষয়ের সব ফাইল কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সে দিন তিনি হাজির না হওয়ায় ১৩ ফেব্রুয়ারি ফের তাঁকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে দিনও তিনি হাজির হননি। এর পরই এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হল।
অপরদিকে পরোয়ানা জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিউ টাউনে নিজের বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন আহবান করেন বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনান। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অসাংবিধানিক। কারণ, হাইকোর্টের কোনও বিচারপতিকে ইমপিচ করা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যায় না।’’ পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, দলিত বলেই তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি সুপ্রিম কোর্টের কর্মী বা চাকর কোনওটাই নয়। তাঁর জুরিসডিকশন সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ারের বাইরে। তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির বিরুদ্ধে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। প্রয়োজনে ওই সাত বিচারপতির বিরুদ্ধে তাঁর জুডিসিয়াল ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন বলে জানান। তাঁর বিরুদ্ধে জারি হওয়া পরোয়ানা বাতিল করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদন জানান।
::খবর- আনন্দবাজার পত্রিকা
Discussion about this post