ডেস্ক রিপোর্ট: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস শনাক্তে ‘জিআর র্যাপিড ডট ব্লট’ কিটের সরকারি অনুমোদনের বিষয়টি দীর্ঘায়িত হওয়ায় এর সমাধানে হাইকোর্টে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার অভিযোগ, সরকারি নিয়ম মেনে কিটের পরীক্ষণ পদ্ধতি বিচার-বিশ্লেষণের জন্য গণস্বাস্থ্যের আবেদনের প্রক্রিয়াটি নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। অসংখ্যবার নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কিট অনুমোদনের বিষয়টি প্রতিপালন করা হলেও কোনও কারণ ছাড়াই দীর্ঘ করা হচ্ছে। এ কারণে তিনি এর সমাধানে হাইকোর্টে যাবেন। এজন্য আরও কয়েকদিন সময় নেবেন বলে জানিয়েছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মঙ্গলবার (২৬) রাতে এসব বিষয় জানান তিনি।
গত রবিবার (২৪ মে) তার প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের উদ্ভাবিত কিটের মাধ্যমে পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার তিনি ডায়ালাইসিসও করেছেন। তিনি জানান, বিশেষ ব্যবস্থায় সামাজিক দূরত্ব মেনে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালেই আজ ডায়ালাইসিস করেছেন তিনি। এই চিকিৎসা তাকে নিয়মিত নিতে হয়।
অননুমোদিত কিট নিয়ে পরীক্ষা করানোর বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ভাগ্যিস এটা ছিল বলেই তো অন্তত একশজন ব্যক্তি কম ইনফেক্টেড হয়েছে।’ সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় সদস্যের বিশেষ কমিটির প্রতিবেদন এখনও জমা পড়েনি। এ বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘অন্যদের বেলায় তো অন্যকিছু লাগে না। বিএসএমএমইউ’র কাজ পুরো শেষ হয়নি, সেটা জানি। তিনশটা করেছে, আর কত করবে, করুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিটের ব্যাপারে কোনও আপডেট নাই, কিচ্ছু নাই। আপনি কোনওটির বেলায় অনুমোদন ছাড়া দেন, আমাদের বেলায় সমস্যা কোথায়? যেটা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত আমাকে হাইকোর্টের কাছেই যেতে হবে। আরও দুতিন দিন অপেক্ষা করবো, তারপর সিদ্ধান্ত নেবো। দেখি কী হয়’
বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘শরীর এখন ভালো আছে। ঘণ্টা দুয়েক আগে ডায়ালাইসিস করে বাসায় আসলাম। আমাকে তো নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। আজকেও করতে হলো। খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে ঠিকঠাক। ভালোই আছি।’
প্রসঙ্গত, ১৭ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণায় কিট উৎপাদনের কথা জানায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ১৯ মার্চ কিট উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন, ড. ফিরোজ আহমেদ এই কিট তৈরি করেন। ২৫ এপ্রিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের কাছে করোনা টেস্টের কিট হস্তান্তর করা হয়। বেশ কিছু দিন কিট পরীক্ষা নিয়ে বিতর্কের পর ৩০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের থেকে বিএসএমএমইউ বা আইসিডিডিআরবিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর ২ মে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার (২৬ মে) থেকে কিটের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের’ জন্য পরিকল্পনা করলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুরোধে প্রক্রিয়াটি স্থগিত আছে।
Discussion about this post