শাহাদাত হোসেনঃ
আমাদের সংবিধানে মূলত ‘পিছিয়ে পড়া’ জনগোষ্ঠির জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা- ‘কোটা’র কথা বলা হয়েছে। উপজাতি বা আদিবাসীদের মধ্যে যারা আদতে পিছিয়ে পড়া তাদের কাছে আদৌ এই কোটার সুফল যাচ্ছে কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এমনকি এটা নিয়ে কোন ফলোআপ স্ট্যাডি হয়েছে বলেও আমাদের জানা নেই। ‘পিছিয়ে পড়া’ বলতে আসলে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে তাও পরিষ্কার নয়।
কিছু ক্ষেত্রে তুলনামূলক বিচারে দেখা গিয়েছে পাহাড়ে বসবাসীদের মধ্যে প্রায় সব জাতিগোষ্ঠি এমনকি বাঙ্গালীরাও বাস্তবে পিছিয়ে পড়া। কিন্তু সেখানে তাদের জন্য কোটা সুবিধা নেই।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা তাদের সন্তানগণ সংবিধানে উল্লেখিত ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির’ অন্তর্ভূক্ত নয় কিন্তু তারা কোটার বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন। এটা নিয়ে কিছুটা বিতর্কও হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এর সাংবিধানিক যৌক্তিকতা নিয়েও। চিন্তা করলে আমরা এর পেছনে একটা যুক্তি পাই তা হলো ‘সম্মাণজনক’ বিশেষ সুবিধা। মুক্তিযোদ্ধারা নিঃসন্দেহে দেশের সূর্যসন্তান। রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে তাদের বিশাল আত্নত্যাগে তাঁরা আমাদেরকে ঋণী করেছেন। আমাদের কাছে তারা দাবী না করলেও আমাদের অবশ্যই দায়িত্ব আছে তাদের জন্য সামর্থানুযায়ী কিছু করার। এটা তাদের আত্নত্যাগের সামান্য প্রতিদান বা স্বীকারোক্তি মাত্র। যদিও আমরা তাদের দাবী যতটা সম্ভব পূরণ করার চেষ্টা করি। আমরা আমাদের ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা পাশে তাদের আবদ্ধ করি।
এমনকি তাদের এই আত্নত্যাগ কিছু অধিকারের জন্ম দেয়, যা রাষ্ট্রের কাছে তাদের প্রাপ্য। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। তাঁদেরকে রাষ্ট্রের অন্যতম সম্মাণজনক ব্যক্তিত্বে পরিণত করে তাদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানো যেতে পারে।
কিন্তু আপত্তিটা হলো তাঁদের সন্তানদের সুযোগ সুবিধা দেয়ার জায়গা হিসেবে কেন বিসিএস বা রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোকে বেছে নেয়া হবে। সুযোগ সুবিধা তো অন্য কোথাও দেয়া যেতে পারে। আমরাতো কোটায় কাউকে পরিক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় বানিয়ে দিতে পারিনা?
সম্মানের খাতিরে সম্মাণজনক জীবনধারনের বিষয় নিশ্চিত করতে পারি। বিশেষ সুবিধা দিয়ে তাদের বিভিন্ন চাকুরীর ব্যবস্থা করতে পারি। কেন তাদের প্রথম শ্রেণির চাকুরীই দিতে হবে? এখানে তো অন্যের বৈষম্যের ব্যাপারটি চলে আসে। যার বাবার বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০-২০ বছর ছিল এবং এরকম নানা কারণে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেনি এমনকি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাও করেনি তাকে রাষ্ট্র কোন অপরাধে এই বঞ্চনার শিকার করছে?
মুক্তিযোদ্ধারা যদি দেশের প্রয়োজনে নিজেদের জীবনের ঝুকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে পারেন, তবে তাঁদের সন্তানদের একটু কষ্ট করে পড়ালেখা করে মেধার ভিত্তিতে প্রথম শ্রেণির চাকুরী নিতে অসুবিধা কোথায়?
আমাদের তো মনে হয়… মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এব্যাপারে স্বউদ্যেগী হয়ে আন্দোলন করা দরকার। কারণ তারা জানে যে তারা এমন এক অযৌক্তিক সুবিধা ভোগ করছে যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী শুধূ বঞ্চিতই হচ্ছে না, কখনো কখনো তারা প্রচন্ড ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে মুক্তিযোদ্ধা এমনকি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করছে। যা সামগ্রিকভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিগঠনে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যেই দেশে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট টাকায় বিক্রির ঘটনা প্রমাণিত, সেই দেশে এই সমস্যা সমাধানের পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কীভাবে যৌক্তিক হতে পারে?
• কাউকে বিশেষ বিবেচনায় পাশ করানো যেতে পারে, কিন্তু প্রথম, দ্বিতীয় করাটা কতটা অযৌক্তিক?
• আমরা চাইলে যে কাউকে সম্মাণ দেখাতেই পারি, কিন্তু তাই বলে অন্যকে বৈষম্য করে?
• একজনকে বৈষম্য করে কীভাবে অন্যের অধিকার বাড়াতে পারি?
জাতি হিসেবে আর কতদিন আমরা এই অযৌক্তিক গন্তব্যের দিকে যাত্রা অব্যহত রাখব ??????
Discussion about this post